২৩ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Labours

মে দিবস ২০২৫ : অধিকার, মর্যাদা ও শ্রমজীবী মানুষের লড়াইয়ের প্রতীক

মে দিবস ২০২৫ উপলক্ষে শ্রমিকদের অধিকার, বর্তমান চ্যালেঞ্জ, সরকার ও সংগঠনগুলোর কর্মসূচি নিয়ে একটি বিশেষ ফিচার। পড়ুন শ্রমিক দিবসের প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন

বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতীক ‘মে দিবস’। ১৮৮৬ সালের শিকাগোর হে মার্কেটের শ্রমিক আন্দোলনের স্মরণে এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে যুগের পর যুগ ধরে। সময় বদলেছে, কিন্তু শ্রমিকের সংগ্রাম আজও থেমে নেই—বাংলাদেশেও নয়।
শিকাগো থেকে ঢাকার পথে: ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি
১৮৮৬ সালের ১ মে, শিকাগো শহরের ‘হে মার্কেট’ চত্বরে ‘৮ ঘণ্টা কর্মদিবস’-এর দাবিতে রক্তাক্ত আন্দোলনের সূচনা হয়। আজ ১৩৯ বছর পরও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেই দাবি আংশিক বাস্তব হলেও শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত হয়নি পুরোপুরি। বাংলাদেশে এই দিনের তাৎপর্য বহুমাত্রিক—এটি একদিকে শ্রমিক আন্দোলনের প্রতীক, অন্যদিকে শ্রমিক-নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক ভিতের উৎসাহদাতা।

২০২৫ সালের প্রেক্ষাপট: অর্থনীতি চাঙ্গা, শ্রমিক সংকটে
বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৫ সালে কোভিড-পরে পুনরুদ্ধারের গতি ফিরে পেয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.৩ শতাংশ, যা মূলত গার্মেন্টস, নির্মাণ ও প্রবাসী আয়ে ভর করে দাঁড়িয়েছে। অথচ, শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকের মৌলিক সমস্যা—কম মজুরি, কাজের অনিরাপত্তা ও ট্রেড ইউনিয়নের দমন—আজও বিদ্যমান।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৬ কোটি ২০ লাখ শ্রমজীবী মানুষ রয়েছে, যার মধ্যে নারী শ্রমিকের হার ৩৭%। তৈরি পোশাক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের প্রায় ৮৩% নারী। অথচ শ্রমিক নিরাপত্তা, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, ও পারিশ্রমিক–এসব ক্ষেত্রে এখনও বিস্তর ঘাটতি রয়ে গেছে।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ও শ্রমজীবীদের ভবিষ্যৎ
গত এক দশকে বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে চুক্তিভিত্তিক (কন্ট্রাকচুয়াল) নিয়োগ ও আউটসোর্সিং। এতে শ্রমিকরা অধিকারের বাইরে পড়ে যান। গাজীপুর ও সাভারের প্রায় ৪৩% গার্মেন্টস শ্রমিক বর্তমানে স্থায়ী কর্মী নয়, ফলে তারা বার্ষিক ছুটি, পেনশন বা গ্র্যাচুইটির আওতায় পড়েন না।

প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও শ্রমবাজারের রূপান্তর
২০২৫ সালে বাংলাদেশে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও অটোমেশনের প্রভাবে অনেক চাকরি বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে। গার্মেন্টস ও কলসেন্টার খাতে বিশেষ করে কাজের ধরনে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। গবেষকরা বলছেন, ‘নতুন দক্ষতা না শেখালে শ্রমিকরা প্রযুক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাবেন।’

মে দিবস কেবল অতীত স্মরণ নয়; এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি জোরালো বার্তা। শ্রমিক কেবল ‘শ্রমদাতা’র কর্মী নন, তিনি অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তাই শ্রমিকের সম্মান, নিরাপত্তা ও ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা রাষ্ট্র ও সমাজের নৈতিক দায়িত্ব।

ক্রম শ্রমিক খাত আনুমানিক শ্রমিকসংখ্যা (লাখে)

  • গার্মেন্টস শিল্প ৪০ লাখ
  •  নির্মাণ খাত ২৫ লাখ
  • কৃষি খাত ১০০ লাখ
  • সেবা খাত ২০ লাখ
  • প্রবাসী শ্রমিক ১২০ লাখ
  • অনানুষ্ঠানিক খাত ৩২০ লাখ