নিজস্ব প্রতিবেদক
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা কর ফাঁকি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের পৃথক দুই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা এবং সাবেক সংসদ সদস্য শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন অবশেষে আদালতে আত্মসমর্পণ করলেও জামিন পাননি। প্রায় ১৭ বছর পর আদালতের মুখোমুখি হলেও তাকে কারাগারেই পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকালে তিনি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এবং আদালত-৭ এ পৃথকভাবে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। কিন্তু শুনানি শেষে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেন। কর ফাঁকির মামলায় বিচারক কবির উদ্দিন প্রামাণিক এবং অবৈধ সম্পদের মামলায় বিচারক রুদ্ধদ্বার শুনানিতে জামিন নামঞ্জুর করেন।
ব্যাকগ্রাউন্ড: কী ছিল মামলার অভিযোগ?
শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন এক সময়ের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ছিলেন এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হিসেবে পরিচিত। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের আওতায় তুহিনের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক গুলশান থানায় দুটি মামলা দায়ের করে।
এক মামলায় অভিযোগ ছিল, তুহিন তার প্রকৃত আয় গোপন করে কর ফাঁকি দিয়েছেন। অপর মামলায় বলা হয়, তিনি ৪ কোটি টাকার বেশি মূল্যের সম্পদের উৎস ব্যাখ্যা করতে পারেননি।
২০০৮ সালে বিচারিক আদালত কর ফাঁকির মামলায় তাকে পৃথকভাবে তিন ও পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন, যা একত্রে পাঁচ বছর ধরে কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। একই বছর অপর মামলায় অবৈধ সম্পদের অভিযোগে আরও ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
কিন্তু রায় ঘোষণার পর থেকেই তুহিন পলাতক ছিলেন। দীর্ঘ ১৭ বছর আত্মগোপনে থাকার পর এ বছর তিনি স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য
তুহিনের এই আত্মসমর্পণ এবং জামিন না পাওয়া বিএনপির জন্য একটি বিব্রতকর রাজনৈতিক ঘটনা। বিশেষ করে বর্তমান সময়, যখন দলটি “দমন-পীড়নের শিকার” বলে অভিযোগ করছে, তখন খালেদা জিয়ার আত্মীয় এমন দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে পলাতক থাকায় সমালোচনার মুখে পড়তে পারে।
এছাড়া এই মামলাগুলোর দীর্ঘসূত্রিতা এবং বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে সাজাপ্রাপ্ত একজন সাবেক এমপি কীভাবে পলাতক ছিলেন, এবং কীভাবে এখন আদালতে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন—এ নিয়ে রাজনৈতিক ও আইনি বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে।
তুহিনের পক্ষে উচ্চ আদালতে জামিন বা আপিলের আবেদন করা হতে পারে। তবে তার জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় আপাতত তাকে কারাগারেই থাকতে হবে। একই সঙ্গে, দীর্ঘ সময় পর দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত একজন রাজনীতিকের আত্মসমর্পণ আইন ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার ওপরও নজর ফেরাবে।