ইউরো শিরোপা : স্পেনের রেকর্ড না ইংল্যান্ডের প্রথম
খেলা ডেস্ক:
এক যুগ নাকি ৫৮ বছরের অপেক্ষার অবসান। স্পেন সবশেষ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল ২০১২ সালে আর ইংল্যান্ডের সামনে প্রথমবার এই শিরোপা জয়ের সুযোগ। আজ ইউরো শিরোপা জিততে পারলে ৫৮ বছর পর (বিশ্বকাপের পর) কোনো বড় টুর্নামেন্ট জিতবে ইংলিশরা। আর স্পেনের সামনে সুযোগ নতুন রেকর্ডের হাতছানি। ১৯৬০ সাল থেকে শুরু ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে এখনো চারবার জিততে পারেনি কোনো দল। জার্মানিকে পেছনে ফেলে সেই কীর্তি গড়ার হাতছানি স্প্যানিশদের সামনে।
বার্লিনের ফাইনালে আজ ফেভারিট ভাবা হচ্ছে স্পেনকে। আর সেটি লা রোজাদের দারুণ ফর্মের কারণেই। কোয়ার্টার ফাইনাল বাদে বাকি পাঁচ ম্যাচ তারা জিতেছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে। এই পথচলায় গোল করেছে ১৩টি। দলটির আক্রমণভাগে আছেন বিস্ময় বালক লামিন ইয়ামাল। সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে ২৫ গজ দূর থেকে চোখ জুড়ানো বাঁকানো শটে লক্ষ্য ভেদ করেন ১৬ বছর বয়সী এই তরুণ। তা ছাড়া দে লা ফুয়েন্তের অধীনে স্পেন খেলছে দলীয় ফুটবলও।
মিডফিল্ডার দানি ওলমো বলেছেন, ‘কঠিন পথ ধরে চলতে হয়েছে আমাদের এবং আমরা যেভাবে এখানে (ফাইনালে) এসেছি, তাতে গর্বিত হওয়া উচিত। যে ধরনের ফুটবল আমরা খেলেছি, সেটাই আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে। আমরা আসলেই ভালো ও উজ্জীবিত অনুভব করছি। শারীরিক ও মানসিকভাবে সেরা অবস্থায় আছি। আমরা জানি, রবিবার আমাদের সামনে সুযোগ অপেক্ষা করছে। দারুণ অনুপ্রাণিত আমরা।’
সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে শুরুতে গোল হজম করার পরও জয় পায় ইংল্যান্ড। পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতা ফেরান অধিনায়ক হ্যারি কেইন। শেষ মুহূর্তে সুপার সাব ওলি ওয়াটকিন্সের গোলে ফাইনালে ওঠে গ্যারেথ সাউদগেটের দল। ইংল্যান্ড ইউরোর গেল আসরেও ফাইনাল খেলেছিল। টাইব্রেকারে তারা হেরেছিল ইতালির কাছে।
ফাইনালের আগে কি বলছেন ইংলিশরা
ফাইনালের আগে ইংলিশ মিডফিল্ডার ডেকলান রাইস বলেন, ‘আবারও ফাইনালে আমরা, যেটি একটি ইতিহাস কিন্তু এখন আমরা আরও বেশি করে দেখাতে চাই। আমরা এ নিয়ে শুধু কথা বলতে চাই না, ফাইনাল খেলে খুশি মনে ফিরতে চাই। আমরা জয়ী দেশ হতে চাই। আগের ফাইনালে আমরা অত আক্রমণ করতে পারিনি, যতটা আমাদের করা উচিত ছিল। এবার সবাই গোলের জন্য ক্ষুধার্ত।’ ইংল্যান্ড এবারের আসরে গোল করেছে ৭টি।
ইংল্যান্ডের আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড় ওয়াটকিন্স অবশ্য ফেভারিট মানছেন প্রতিপক্ষ দলকে। আর সেটি ইতালি, জার্মানি ও ফ্রান্সকে হারিয়ে আসার কারণেই। ওয়াটকিন্স বলেন, ‘তারা আমাদের চেয়ে কঠিন পথ পেরিয়ে এসেছে, তথাকথিত বড় দল ইতালি, জার্মানি ও ফ্রান্সের বিপক্ষে খেলেছে…আমি মনে করি তারা সম্ভবত এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সেরা দল। আমাদের দলেও বিশ^মানের ফুটবল প্রতিভা আছে ম্যাচটি দেখতে এবং এর অংশ হতে তর সইছে না। আশা করি, আমরা শিরোপা জিততে পারব।’
ইংল্যান্ডকে মনোযোগ দিতে হবে গোল করায়। পুরো টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল পর্যন্ত মাত্র ৭টি গোল করেছে সাউদগেটের দল। ইংল্যান্ড ও স্পেন দুই দলই সেমিফাইনালে পিছিয়ে পড়েও ম্যাচ জিতেছে।
নিষেধাজ্ঞার কারণে সেমিফাইনালে খেলেননি স্পেনের রাইট ব্যাক দানি কার্ভাহাল। তার নিষেধাজ্ঞা শেষ। ধারণা করা হচ্ছে শুরুর একাদশে ফিরবেন কার্ভাহাল। তার জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হবে আরেক রাইট ব্যাক জেসুস নাভাসকে। স্পেনের ২০১২ ইউরোজয়ী দলের সদস্য ছিলেন জেসুস নাভাস। ইংল্যান্ড দলে নেই কোনো ইনজুরি সমস্যা।
স্পেনের ইয়ামাল ছাড়াও নিকো উইলিয়ামস ও রদ্রির দিকে বাড়তি নজর রাখতে হতে পারে ইংলিশ ডিফেন্ডারদের। আর ইংল্যান্ডের বেলিংহ্যাম, হ্যারি কেইনরা পরীক্ষিত সৈনিক। বেলিংহ্যাম জ¦লে উঠলে কী করতে পারেন তা গেল মৌসুমে দেখিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদে।
স্পেন- ইংল্যান্ড সবশেষ মুখোমুখি হয়েছিল ২০১৮
স্পেন ও ইংল্যান্ড সবশেষ মুখোমুখি হয়েছিল ২০১৮ নেশন্স লিগের গ্রুপ পর্বে। গ্রুপ পর্বে দুইবারের দেখায় একটি করে জয় স্পেন ও ইংল্যান্ডের। তবে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে আছে ইংলিশরাই। স্পেনের বিপক্ষে ১৪ ম্যাচ জিতেছে, হেরেছে ১০টি। ড্র হয় ৩ ম্যাচে।
আজ রাত ১টায় শুরু হবে স্পেন-ইংল্যান্ড ফাইনাল ম্যাচটি। ২০১২ ইউরোর ফাইনালে স্পেন করেছিল ৪ গোল। ইংল্যান্ড যে ১৯৬৬ সালে বিশ^কাপ জিতেছিল, সেই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছিলেন জিওফ হার্স্ট। গেল ইউরোতে কাছে গিয়েও পারেনি দল, এবার ফাইনালে একজন জিওফ হার্স্টের খোঁজে থাকবেন সমর্থকরা। শিরোপাটা জিতলেই তো পূর্ণতা পাবে ‘ইটস কামিং হোম’ গানটি।