২১ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মরদেহ সংরক্ষণে বিএসএমএমইউতে চালু হলো দেশের প্রথম প্লাস্টিনেশন ল্যাবরেটরি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে মরদেহ সংরক্ষণে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চালু হলো দেশের প্রথম প্লাস্টিনেশন ল্যাবরেটরি ও এনাটমি মিউজিয়াম কমপ্লেক্স। এই পদ্ধতিতে মানুষের মরদেহ ও বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।
আজ বুধবার বিএসএমএমইউয়ের এনাটমি বিভাগে এই ল্যাবরেটরি ও মিউজিয়াম উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক।

এসময় উপাচার্য বলেন, এনাটমি একটি কঠিন বিষয় হলেও এটা চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি মৌলিক বিষয়। এনাটমিতে দক্ষ না হলে ভালো চিকিৎসক হওয়া সম্ভব নয়। দক্ষ চিকিৎসক হওয়ার জন্য এনাটমির উপর পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। প্লাস্টিনেশন পদ্ধতি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতির উপর একটি ফেলোশিপ প্রোগ্রাম চালু করা সম্ভব হলে সারাদেশের মেডিকেল শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে, যা মেডিকেল শিক্ষা ও গবেষণাকে আরো উন্নত সমৃদ্ধ করবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে ফেলোশিপ প্রোগ্রাম চালুর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রচলিত পদ্ধতিতে মৃত মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফরমালিনের রেখে সংরক্ষণ করা হয় এবং শিক্ষা এবং গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু প্লাস্টিনেশন পদ্ধতিতে প্রচলিত পদ্ধতি থেকে একটু আলাদা প্রযুক্তি ব্যবহার করে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংরক্ষণ করা হয়। প্লাস্টিনেশন পদ্ধতিতে ফরমালিন ছাড়াও এসিটোন ও সিলিকন ব্যবহার করা হয়।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আঞ্জুমান বানু বলেন, প্লাস্টিনেশন পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা মরদেহে দুর্গন্ধ হয় না, অনেকদিন রাখা যায়। একবার এই পদ্ধতিতে কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংরক্ষণ করা গেলে আর কোনদিনই নষ্ট হবে না। কিন্তু এখন দেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে অ্যালকোহল ব্যবহার করে সংরক্ষণ করা হয়। এতে পুরো দেহ বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো সারাক্ষণ ফ্লুইডের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে হয়। তিন মাস পর পর ফ্লুইড বদলাতে হয়। এটা ব্যয়বহুল ও পরিবেশের ওপর খারাপ প্রতিক্রিয়া পড়ে।

এই এনাটমি বিশেষজ্ঞ বলেন, প্লাস্টিনেশন পদ্ধতি খুব ব্যয়বহুল না। কিছু প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি থাকলে, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করা গেলে খুব সহজেই এই পদ্ধতিতে মরদেহ সংরক্ষণ করা যায়। প্লাস্টিনেশন পদ্ধতি পিরামিডের মমির মতো, কখনো ধ্বংস হয় না।

এই চিকিৎসক বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে ২০-২৫ বছরের পুরনো মরদেহ সংরক্ষণ করা আছে। কিন্তু ধীরে ধীরে সেগুলো কিছুটা বিকৃত, দেখতে খারাপ হয়ে যায়। মুল বৈশিষ্ট্য ঠিক থাকে না। পড়ালেখা করা কঠিন হয়। বিএসএমএমইউতে প্রচলিত পদ্ধতিতে যেগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে, সেগুলো সেভাবেই থাকবে। পাশাপশি বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্লাস্টিনেশন পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হবে। কারণ ফাংশনাল এনাটমি দেখাতে গেলে প্লাস্টিনেশন লাগবে।

এই বিশেষজ্ঞ জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক আগে থেকেই প্রাণীদেহ প্লাস্টিনেশন পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু মানবদেহের ওপর প্লাস্টিনেশন পদ্ধতির প্রয়োগ ৯০ দশকের দিকে প্রথম জার্মানিতে শুরু। এখন ভারতও করছে। আমেরিকা অনেক আগে থেকেই করে। কারণ ওখানে মরদেহ পাওয়া যায় না।