২ জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ihsan-aktas

নেতানিয়াহু কি ট্রাম্পকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফাঁদে ফেলছেন?

ইহসান আকতাস

নেতানিয়াহু কি ট্রাম্পকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফাঁদে ফেলছেন?, গাজায় নেতানিয়াহুর সহিংসতা চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। তার পরবর্তী পদক্ষেপ হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানো, যা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।

একটি বিষয় সবাই জানে, যখনই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বিশ্ব জুড়ে প্রবল চাপের মুখে পড়েন, তখন তিনি এমন এক চাল চালেন, যা দ্বারা নিজের ওপর থেকে চাপ হালকা করতে পারেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যারা শয়তানের পূজা করে, তারা বোধহয় নেতানিয়াহুর কাছ থেকেই প্রেরণা গ্রহণ করে এবং এমন সব নিষ্ঠুর কৌশল অবলম্বন করে, যা হয়ত শয়তান নিজেও কল্পনা করতে পারে না। এখন যা হচ্ছে তা মানবজাতির জন্য এক করুণ পরিণতির ইঙ্গিত।

সম্প্রতি একটি ম্যাডলিন বোট গাজার উদ্দেশে রওনা হয়, যাতে ১২ জন মানবাধিকারকর্মী ছিলেন। এটি বিশ্বব্যাপী নজর কাড়ে। কিন্তু ইসরায়েলের জলসীমায় পৌঁছানোর পরই এটি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং যাত্রীরা ২০১০ সালের মাভি মারমারা ফ্লোটিলার মতোই ভয়ংকর পরিণতির মুখে পড়েন।

মাভি মারমারা অভিযানে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন তুর্কি মুসলিম, ফলে ইসরায়েল সরাসরি হামলা চালায় এবং সাতজন শাহাদত বরণ করেন। তবে এবারের যাত্রীরা যেহেতু ইউরোপীয়, তাই ইসরায়েল কিছুটা সংযত থাকে এবং একই রকম ভুল এড়ায়।

ত্রাণ বিতরণের সময় শত শত ফিলিস্তিনিকে একত্র করে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ত্রাণ বিতরণের মধ্যেও ইসরায়েলি বাহিনী মেশিনগান দিয়ে জনগণের ওপর গুলি চালায়। এটা যেন হিটলারের নতুন রূপ, এক শয়তানি অবতার। আল্লাহ যেন বিশ্ব ও মানবতাকে এই দুর্বিপাক থেকে রক্ষা করেন।

এই ঘটনার ঠিক আগের দিন বিশ্বব্যাপী নেতানিয়াহু এবং তার দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ পায়। ইউরোপ, মুসলিম বিশ্ব এমনকি ইসরায়েলের ভেতরেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু অতীতের মতো এবারও নেতানিয়াহু চাপ থেকে বাঁচতে বিষয়টি ঘুরিয়ে দেন।

এর আগেও তিনি হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করেন। এরপর হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করতে উদ্যোগী হন এবং লেবাননে হামলা চালান। আর সম্প্রতি তিনি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করেন। এটিও এক ধরনের বিভ্রান্তিমূলক চাল।

বিশ্ব মিডিয়া ও মতপ্রকাশকারীরা নেতানিয়াহুর এই ঘৃণ্য কৌশলে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে যে, তারা এখন তার পেছনে পুতুলের মতো অনুসরণ করে। তিনি বর্বর সিদ্ধান্ত নেন, আর গণমাধ্যমগুলো সেটারই পদচিহ্ন অনুসরণ করে চলে।

যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর নেতানিয়াহু আশা করেছিলেন তারা একসঙ্গে ইরানে হামলা করবে। তিনি বিশ্বাস করতেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোকে যুদ্ধে জড়াতে পারলেই তিনি নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারবেন। কিন্তু ট্রাম্পের আচরণ প্রত্যাশিত ছিল না। তিনি ইরান প্রসঙ্গে বরং শান্তির ইঙ্গিত দেন। তিনি বারবার বলেন, ইরানের ওপর হামলা হলে সেটি ইসরায়েলের সিদ্ধান্তে হবে, যুক্তরাষ্ট্রের নয়। তিনি কূটনীতিক অবস্থান বজায় রাখেন। তবু নেতানিয়াহু তার সেই পুরনো পরিকল্পনা ছাড়েননি। তিনি এখনো ট্রাম্পকে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চাইছেন।

৭ অক্টোবরের ঘটনার পর একটি নির্মম সত্য উন্মোচিত হয়, পৃথিবীতে একটি মাত্র সত্যিকারের শক্তি রয়েছে, সেটি হলো জায়নিস্ট রাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স কিংবা জার্মানির নিজস্ব কোনো মত নেই। তারা কেবলমাত্র জায়নিস্ট আদেশ পালন করে। যদি অন্য কোনো শক্তি থাকত, তাহলে এই যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যেত কিংবা অন্তত একটি নৈতিক প্রতিবাদ দেখা যেত।

স্পষ্ট করে বলতে গেলে, মুসলিমদের পক্ষে কাজ করার দাবিদার আইএস এবং নেতানিয়াহুর উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। জায়নিস্টরা এখন পুরো বিশ্বকে কব্জা করেছে এবং নিজেদের ইচ্ছামতো পরিচালনা করছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে গুরুতর টানাপড়েন তৈরি হচ্ছে।

এখন দেখার বিষয়, গাজায় গণহত্যার কারণে কোণঠাসা নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে পারেন কি না। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, জার্মানরা যখন তাদের উন্মাদ নেতা হিটলারকে থামাতে ব্যর্থ হয়েছিল, তখন তা ৪ কোটি ইউরোপীয়র প্রাণহানির কারণ হয়েছিল। এখন মানবজাতিকে (ইহুদি ও আমেরিকান) একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কি হিটলারের ছদ্মবেশে আবির্ভূত পাগল নেতানিয়াহুকে থামাবে, নাকি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগিয়ে পৃথিবীকে ডুবতে দেবে?

বর্তমান রাজনীতি ও কূটনৈতিক বাস্তবতা অভূতপূর্ব উত্তেজনায় পরিপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র ও সমগ্র বিশ্ব জানে, ইরানের মতো একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ মানে পুরো পৃথিবীকে রক্তস্নান করানো। যদি আমেরিকা এই ফাঁদে পা দেয়, তবে ইরান ও তার জনগণের চিরস্থায়ী শত্রুতে পরিণত হবে।

প্রশ্ন থেকে যায়, ট্রাম্পের পথ কি সফল হবে, নাকি নেতানিয়াহুর? যদি নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে রাজি করাতে সক্ষম হন, তাহলে আমরাও বলতে পারি, ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে স্বাগতম’!

 

ডেইলি সাবাহ থেকে ভাষান্তর : মাইসারা জান্নাত

লেখক : ইহসান আকতাস, বোর্ড চেয়ারম্যান, জেনার রিসার্চ কোম্পানি।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
X
LinkedIn