১ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আফগানরা কি ইতিহাস গড়বে ?

ক্রীড়া প্রতিবেদক:

আফগানিস্তান যদি টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে, খুব কি অবাক হবেন? আমার তো মনে হয় না। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৬টায় ত্রিনিদাদের দ্য ব্রায়ার্ন লারা ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে প্রথম সেমিফাইনালে আফগানদের প্রতিপক্ষের নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। যে দলটি এর আগে সাতটি বৈশ্বিক আসরের সেমিফাইনালে খেলেছে এবং হেরেছে সবকটি। নকআউট পর্ব থেকে বিদায়ের এই অভ্যাসে ‘চোকার’ তকমাটা নিজেদের করে নেওয়া প্রোটিয়াদের আরেকবার কাঁদিয়ে আফগানদের ফাইনাল মঞ্চে পা রাখা তাই একেবারেই অসম্ভব নয়। যারা নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় করে সুপার এইটে এসেছে। এরপর পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশকে ফেরার পথ দেখিয়ে গড়েছে অবিস্মরণীয় কীর্তি। রশিদ খান, ফজলহক ফারুকি, রহমানউল্লাহ গুরবাজদের ব্যাটে-বলের বিস্ফোরণে প্রোটিয়ারা আরেকবার চোক করে যাবে না, সেটাই বা কীভাবে বলেন? তবে যে দলই জিতুক, এটাই হবে তাদের প্রথম। প্রোটিয়াদের আটবারের চেষ্টায়। আর আফগানদের প্রথম চেষ্টাতেই মিলবে স্বপ্নের ফাইনালের টিকিট।

রশিদ খানকে আজ টস করতে দেখে কি আফসোস হবে নামজুল হোসেন শান্তর? আজ তো এইডেন মার্করামের সঙ্গে ভাগ্য পরীক্ষায় তিনিও নামতে পারতেন। অবশ্য নামতে চেয়েছেন কি না, সেটা নিয়েই হচ্ছে কাটাছেঁড়া। সেন্ট ভিনসেন্টে সুপার এইটের শেষ ম্যাচে আফগানরাই বাংলাদেশকে দিয়েছিল প্রথম সেমিফাইনালে পা রাখার সুযোগ। প্রথমে ব্যাট করে রশিদরা জমা করেছিল মাত্র ১১৫ রান। যা ১২.১ ওভারে টপকে গেলেই সেমিফাইনালে চলে যেত বাংলাদেশ। ব্যাটারদের ব্যর্থতা আর টিম ম্যানেজমেন্টের নির্বুদ্ধিতায় সেটা তো হয়ইনি বরং বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশ ম্যাচটা হেরেছে ৮ রানে। আর এখানেই আফগানরা নিজেদের পরিণত একটি ইউনিট হিসেবে প্রমাণ দিয়েছে। ছোট পুঁজি, তারপরও তারা এক মুহূর্তের জন্য আশা ছাড়েনি। এটুকু তারা জানত যে, বাংলাদেশ ১২.১ ওভারের মধ্যে চাইবে জিতে যেতে। সেটা করতে গিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটাররা ঝুঁকি নেবে। আর তাতেই মিলবে উইকেট শিকারের সুযোগ। দারুণ ফর্মে থাকা আফগান বোলাররা সেই ফাঁদেই বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ঠিক এভাবেই আরেকবার আজ জ্বলে উঠলে প্রোটিয়াদের হয়তো আরেকবার সঙ্গী হবে কান্না।

যদিও এই দক্ষিণ আফ্রিকাকে অন্যরকম দাবি করেছেন কোচ রব ওয়াল্টার। ১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরে পরের বছরই সেমিফাইনালে নাম লিখিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। বৃষ্টিবিঘ্নিত সেই সেমিতে ইংল্যান্ডের কাছে ১৯ রানে হারের ভাগ্য বরণ করতে হয় তাদের। সেই শুরু। এরপর আরও চারটি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ও দুটি টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়। কোচের দাবি এবার অন্য কিছু হবে। ওয়াল্টার সেটা করতে পারছেন পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই শিষ্যদের অসাধারণ পারফরম্যান্সে। গ্রুপপর্বের চার প্রতিপক্ষের সঙ্গে ভীষণ লড়াই করে জিতেছিল প্রোটিয়ারা। শেষ সময়ের প্রবল চাপে ভেঙে না পড়ে তারা হারায় শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ডস এবং নেপালকে। এরপর সুপার এইটে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষেও জয়টা আসে চাপ জয় করে।

এরপর ইংল্যান্ড ও সর্বশেষ স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে তারা গ্রুপসেরা হয়। উইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচটা অনেকটা নকআউট ম্যাচের মতোই হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যারা জিতবে তারাই উঠবে সেমিতে, এমন অঙ্ক মিলিয়ে প্রোটিয়াররা আজকের সেমিফাইনালে। তাই বিশ্বাসটা প্রবল ওয়াল্টারের। চাপ থাকবে, সেটাকে পেছনে ফেলার পথটা তাদেরই বের করতে হবে। চোকার দুর্নাম ঘোচানোর যে এটাই সুযোগ তাদের সামনে। ওয়াল্টার শিষ্যদের কাছে সেই বার্তাটাই পৌঁছে দিতে চাচ্ছেন উপভোগের মন্ত্র শুনিয়ে। অতীত ভুলে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলতে বলছেন এই অভিজ্ঞ কোচ, ‘আগে যারা খুব কাছে গিয়েও পারেনি, তার দায় তাদের। সত্যি বললে, এই দক্ষিণ আফ্রিকা আলাদা দল। আমাদের যা কিছু আছে, সেসব শুধুই আমাদের। আমরা তাকাব আমাদের নিকট অতীতের পারফরম্যান্সে, যেখানে আমরা বারবার উতরে যেতে পেরেছি। সেমিতেও আমরা সে রকমই ভাবছি।’

এই ম্যাচে দুদলেই যারা খেলছেন, তাদের হরহামেশাই দেখা হয়ে যায় দুনিয়া জুড়ে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে। সবচেয়ে জমজমাট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে এই দুদলের ক্রিকেটের ভীষণ কদর। প্রোটিয়ারা তো আছেনই, আফগানদের নিয়েও ভারতীয়দের মাতামাতির শেষ নেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশটি খেলেছে, সেই একাদশের সাতজন আইপিএলের বিভিন্ন ক্লাবে নিয়মিত খেলেছেন। ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা হয়ে আফগানরা বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলে যত অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, সেগুলো জাতীয় দলে এসে একীভূত করে গড়ে উঠেছে এক দুর্দান্ত ইউনিট। সেই ইউনিটকেই একের পর এক বড় স্বপ্ন দেখিয়ে যাওয়া ইংলিশ কোচ জোনাথন ট্রট মনে করেন সেমিফাইনালে আরও ভয়ংকর এক আফগানিস্তানকে দেখা যাবে, ‘আমাদের জন্য এটা একেবারে নতুন একটা চ্যালেঞ্জ। আর এটাই আমাদের আরও ভয়ংকর করে তুলতে পারে, কারণ এই সেমিফাইনালে দল হিসেবে আমাদের হারানোর কিছু নেই বরং পাহাড়সমান চাপ থাকবে প্রতিপক্ষের ওপরে।’

ট্রট প্রোটিয়াদের চোকার দুর্নামটাই যেন মনে করিয়ে দিতে বললেন এমন কথা। বলবেনই তো, এই মনে বাঘের আঘাতেই যে অতীতে বারবার ক্ষতবিক্ষত হতে হয়েছে। এবার আফগানদের পালা প্রোটিয়াদের বিদায় করার। সেটা করতে পারলে টি-২০ বিশ্বকাপে এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রথম জয়টাও মিলে যাবে। এই প্রথম আর প্রথম ফাইনালের অঙ্কটা মিলে গেলেই হবে আফগান রূপকথা। আটে প্রথমের স্বপ্নের বিভোর প্রোটিয়ারাও নিশ্চিয় সেরা সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইবে না।
সব মিলিয়ে ভীষণ রোমাঞ্চকর একটা ম্যাচের সাক্ষী হতে আরেকবার ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে এই অঞ্চলের ক্রিকেটপ্রেমীদের।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
X
LinkedIn