🟨 দুবাইয়ে স্বর্ণের দাম কমছে, বড় কেনাকাটার অপেক্ষায় ক্রেতারা

সমাজকাল ডেস্ক

সপ্তাহের শুরুতে দুবাইয়ের স্বর্ণবাজারে দেখা দিয়েছে মূল্য হ্রাসের প্রবণতা। সোমবার ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম নেমে এসেছে প্রতি গ্রাম ৩৬৭ দিরহামে। গত শুক্রবারের ৩৭১.২৫ দিরহামের তুলনায় এটি একটি লক্ষণীয় পতন। বাজার বিশ্লেষক ও বিক্রেতারা বলছেন, দাম আরও কমে ৩৫০-৩৬০ দিরহামের মধ্যে নামার সম্ভাবনা থাকায় অনেক ক্রেতা আপাতত অপেক্ষা করছেন।

গালফ নিউজের খবরে বলা হয়, গ্রীষ্মকালীন ছুটির আগে স্বর্ণালংকার কেনার পরিকল্পনা অনেকেরই থাকলেও দাম আরও কমার প্রত্যাশায় বাজারে ‘প্রত্যাশিত ক্রয়-বিলম্ব’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দুবাই গোল্ড অ্যান্ড জুয়েলারি গ্রুপের বোর্ড সদস্য এবং সিরোয়া জুয়েলার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চন্দু সিরোয়া জানান, “দাম যতবার কমেছে, আমিরাতের ক্রেতারা তাৎক্ষণিকভাবে স্বর্ণ কিনেছেন। এটি এক অর্থে ভবিষ্যতে মূল্য বৃদ্ধির ইঙ্গিতও হতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “গত সপ্তাহে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম এক পর্যায়ে ৩৮১.৭৫ দিরহামে পৌঁছেছিল, যা সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ। সেই তুলনায় বর্তমান দাম অনেকটাই কম। তবে এ কমদাম সম্ভবত অস্থায়ী।”

এক স্থানীয় স্বর্ণ বিক্রেতা জানান, গত দুই মাস ধরে দামের ধারাবাহিক ঊর্ধ্বগতি অনেক ক্রেতার মধ্যে ‘মূল্য ক্লান্তি’ তৈরি করেছে। তার মতে, দাম ৩৬০ দিরহামের নিচে নামলেই বাজারে আবার বড় আকারের কেনাকাটা শুরু হতে পারে।

বিশ্ববাজারেও স্বর্ণের মূল্য পতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রায় ৭০ ডলার কমে বর্তমানে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম দাঁড়িয়েছে ৩,২৭১ ডলার, যা আরও কমার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই পতনের পেছনে মূল কারণ হিসেবে বিশ্লেষকেরা উল্লেখ করছেন সুইজারল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্ক হ্রাস নিয়ে চলমান ইতিবাচক আলোচনা।

দাম হ্রাসের এই পরিস্থিতি গ্রীষ্মকালীন কেনাকাটার জন্য একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে, তবে মূল প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে—স্বর্ণের দাম কতদূর নামবে?

📉 বাংলাদেশে স্বর্ণের দামের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশেও গত কয়েক মাস ধরে স্বর্ণের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ২০২৫ সালের এপ্রিলের শেষ দিকে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ভরিপ্রতি (১১.৬৬৪ গ্রাম) দাম এক সময় ১,১৬,০০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়, যা দেশের ইতিহাসে অন্যতম সর্বোচ্চ। দেশের বাজারে স্বর্ণের দর নির্ধারণ করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য ওঠানামার সঙ্গে মিল রেখে বাজুস প্রায় নিয়মিতই দাম হালনাগাদ করে। তবে দেশীয় বাজারে স্বর্ণের মূল্য শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক বাজারের উপর নির্ভর করে না—এর সঙ্গে মজুত খরচ, ডলার-টাকার বিনিময় হার, আমদানি ব্যয় এবং ভ্যাট-ট্যাক্সও বিবেচ্য।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম কমতির দিকে থাকলেও বাংলাদেশে এর প্রভাব ধীরে পড়ে। কারণ দেশে স্বর্ণ আমদানি, সরবরাহ এবং মূল্য নির্ধারণে একটি সময়িক ব্যবধান থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, আন্তর্জাতিক দামে পতন হলেও স্থানীয় বাজারে দাম অপরিবর্তিত থাকে বা সামান্য কমে। এ ছাড়া বাংলাদেশে গহনা শিল্পের মৌসুমি চাহিদা (বিয়ে মৌসুম, উৎসব) এবং চোরাইপথে স্বর্ণ প্রবেশের ওপরও দাম ওঠানামার প্রভাব পড়ে।

যদি আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের পতন অব্যাহত থাকে এবং টাকার বিপরীতে ডলারের মান স্থিতিশীল থাকে, তাহলে বাংলাদেশেও শিগগিরই স্বর্ণের দামে হ্রাস দেখা যেতে পারে বলে আশাবাদ প্রকাশ করছেন খুচরা বিক্রেতারা।