সমাজকাল ডেস্ক:
আজ বুধবার, ৭ মে। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির ১২৭তম দিন। বছর শেষ হতে বাকি ২৩৮ দিন।
ইতিহাসের প্রতিটি দিন যেমন গৌরবময় অর্জনের, তেমনি বিষাদময় বিদায়েরও। ৭ মে স্মরণীয় হয়ে আছে এমন কিছু বিশিষ্ট মানুষের মৃত্যুর জন্য, যাঁরা তাঁদের জীবন, চিন্তা ও সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতে রেখে গেছেন স্থায়ী ছাপ। তাঁদের অবদান আমাদের চেতনাকে করেছে সমৃদ্ধ, আবার তাঁদের শূন্যতা আমাদের করে বেদনার্ত।
সমাজকাল আজ গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করছে সেইসব মহাপুরুষ ও গুণীজনকে, যাঁরা এই দিনে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন, কিন্তু রেখে গেছেন অমলিন স্মৃতি, বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তরাধিকার এবং মানবতার প্রতি দায়বদ্ধতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
৮৩৩ – ইবনে হিশাম
বিখ্যাত ও প্রাচীন ইসলামি জীবনীগ্রন্থ সীরাতু রাসূলিল্লাহ্-এর সংকলক হিসেবে ইবনে হিশাম বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তিনি ইবনে ইসহাকের সংকলিত জীবনী সম্পাদনা করে সংরক্ষিত করেন, যা নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সীরাত হিসেবে বিবেচিত হয়। ইসলামী ইতিহাস গবেষণায় তাঁর অবদান অতুলনীয়।
১৮২৫ – আন্তোনিও সালিয়েরি
ইতালীয় ধ্রুপদী সংগীতশিল্পী ও সুরকার সালিয়েরি অস্ট্রো-ইতালীয় ঐতিহ্যে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। ভিয়েনার রাজদরবারে তিনি দীর্ঘদিন প্রধান সুরকার ছিলেন এবং বহু সংগীতশিক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। যদিও তাঁকে নিয়ে মোজার্টের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার নানা বিতর্ক আছে, তবে সংগীত ইতিহাসে তাঁর নিজস্ব অবদান স্বীকৃত।
১৮৪০ – কাসপার ডাভিড ফ্রিডরিখ
জার্মান রোমান্টিক ধারার অগ্রদূত চিত্রশিল্পী ফ্রিডরিখ তাঁর একাকীত্ব, প্রকৃতি ও আধ্যাত্মিকতার উপস্থাপনায় অনন্য। তাঁর আঁকা Wanderer above the Sea of Fog ছবিটি বিশ্ব চিত্রকলায় কালজয়ী নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত। প্রকৃতিকে দর্শনের মাধ্যম হিসেবে রূপায়ণ করার ক্ষেত্রে তিনি অন্যতম পথিকৃৎ।
১৯০৯ – হের্মান অস্ট্হফ
এই জার্মান ভাষাবিজ্ঞানী ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলোর শব্দধ্বনিগত পরিবর্তন ও রূপগত গঠন নিয়ে গবেষণায় প্রভূত অবদান রাখেন। তাঁর কাজ মূলত ভাষার শিকড় সন্ধান ও ধ্বনি বিবর্তন বিশ্লেষণে দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করেছে।
১৯২৪ – আল্লুরি সিতারামারাজু
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নায়ক, যিনি আদিবাসীদের নিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন। তাঁকে ‘ভারতের রবিন হুড’ বলা হয়, কারণ তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিলেন এবং উপনিবেশবাদী শাসকদের চোখে ছিলেন এক দুর্ধর্ষ বিপ্লবী।
১৯৪১ – স্যার জেমস ফ্রেজার
স্কটিশ নৃতত্ত্ববিদ ও লেখক, যাঁর কালজয়ী রচনা The Golden Bough বিশ্বসাহিত্য ও সমাজবিজ্ঞানের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে। তিনি জাদু, ধর্ম ও পৌরাণিক বিশ্বাসের বিকাশ ব্যাখ্যা করে তুলনামূলক নৃতত্ত্বের ভিত্তি গড়ে দেন।
১৯৫১ – ওয়ার্নার ব্যাক্সটার
অস্কারজয়ী মার্কিন চলচ্চিত্র অভিনেতা, ১৯২৯ সালে In Old Arizona সিনেমায় অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি সাইলেন্ট সিনেমা থেকে টকিজ যুগে সফলভাবে স্থানান্তরিত হওয়া প্রথম সারির অভিনয়শিল্পীদের একজন।
১৯৭১ – রণদাপ্রসাদ সাহা
বাংলাদেশের সমাজসেবা ও শিক্ষাক্ষেত্রে এক কিংবদন্তি নাম। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে তিনি নারীর স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তাঁর নির্মম হত্যাকাণ্ড জাতিকে শোকাহত করেছিল।
১৯৭৪ – বাসন্তী দেবী
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের এক বিশিষ্ট নারী নেত্রী, চিত্তরঞ্জন দাশের সহধর্মিণী। গান্ধীর অহিংস আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে তিনি ভারতীয় নারীদের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। তিনিই প্রথম নারী যিনি ব্রিটিশ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন।
১৯৯৩ – অজিতকৃষ্ণ বসু
বাংলা সংগীত ও ব্যঙ্গরচনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন তিনি। হাস্যরসাত্মক গান ও নাট্য রচনার মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের জীবনের নানা দিক তুলে ধরেছেন স্বতঃস্ফূর্ত ও বুদ্ধিদীপ্ত ভঙ্গিতে।
২০০৩ – শিশির কুমার দাশ
প্রখ্যাত কবি, নাট্যকার, অনুবাদক ও বাংলা সাহিত্যের গবেষক। তাঁর সম্পাদিত Bangla Sahityer Itihas এবং বাংলা সাহিত্যের বিশ্বকোষ সাহিত্যচর্চায় অনন্য অবদান। সাহিত্যের সীমানা পেরিয়ে অনুবাদ ও নাট্যচর্চাতেও তিনি রেখেছেন গৌরবোজ্জ্বল উপস্থিতি।
২০১৯ – সুবীর নন্দী
বাংলাদেশের গানের জগতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী। আধুনিক গান, চলচ্চিত্র সঙ্গীত, লোক ও নজরুলসংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হন। তাঁর কণ্ঠে ফুটে উঠত গভীর আবেগ ও আত্মার স্পর্শ।
২০২২ – পার্থ ঘোষ
ভারতের কিংবদন্তি আবৃত্তিশিল্পী, যিনি বাচিকশিল্পকে গণমাধ্যম ও শ্রোতৃমনে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। ‘আমি চিরদিন রইব তোমার কাব্যে’ উচ্চারণ করে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক আবেগময় শিল্প-প্রতীক। আবৃত্তিকে অভিনয় ও কণ্ঠনাট্যের সীমা ছাড়িয়ে এক উচ্চতর শিল্পরূপ দিয়েছেন তিনি।
সমাপ্তিতে:
প্রয়াত এই মহামানবেরা তাঁদের কীর্তির মাধ্যমে আজও আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন। সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সংগীত, চিত্রশিল্প কিংবা মানবসেবার ইতিহাস তাঁদের নাম উচ্চারণ করলেই ধন্য হয়।
তাদের প্রতি সমাজকালের পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।