২২ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Mosura

৫০৬ মিলিয়ন বছরের পুরোনো তিন-চোখ বিশিষ্ট সামুদ্রিক শিকারি ‘মোসুরা’

সমাজকাল ডেস্ক:

একটি প্রাচীন সামুদ্রিক প্রাণীর ৬০টিরও বেশি জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন এমন এক আশ্চর্য শিকারি, যার মাথায় ছিল তিনটি চোখ—এবং যার গঠন আজকের কোনও প্রাণীর সঙ্গে মেলে না। নাম ‘মোসুরা ফেনটোনি’। প্রায় ৫০৬ মিলিয়ন বছর আগে সমুদ্রে বিচরণ করত এই ‘সি মথ’ নামক ক্ষুদ্র অথচ চতুর শিকারি।

এই প্রাণীটির বিশেষত্ব হলো—এটি রেডিওডন্ট নামক একটি বিলুপ্ত প্রাণীগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত, যারা আর্থ্রোপড বা সন্ধিপদ প্রাণীদের প্রাচীন পূর্বসূরি। এই গোষ্ঠীর অধ্যয়ন আধুনিক পোকামাকড়, মাকড়সা ও কাঁকড়ার বিবর্তনের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়।

অনন্য গঠন ও শ্বাসপ্রশ্বাস পদ্ধতি

‘মোসুরা’-এর দেহের পেছনে ছিল ১৬টি সেগমেন্ট, যার মধ্যে কয়েকটি ছিল শ্বাসনালী বা গিলযুক্ত। এই গঠন আজকের ঘোড়ার নাল, পোকামাকড় কিংবা উডলাইসের মতো প্রাণীদের গঠনের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, এটি evolutionary convergence বা স্বতন্ত্র বিবর্তনীয় পথ চলার এক প্রমাণ—যেখানে আলাদা প্রাণীগোষ্ঠী একই ধরনের অঙ্গ তৈরি করে সময়ের সাথে সাথে।

এর তৃতীয় চোখটি ছিল মাথার মাঝখানে, যা কোনও আধুনিক প্রাণীর মধ্যে দেখা যায় না। এটি সম্ভবত শিকারের অবস্থান নির্ধারণ ও দিক জ্ঞাপনে সাহায্য করত।

মস্তিষ্ক, পরিপাক ও স্নায়ুতন্ত্রের চিহ্ন

বিজ্ঞানীরা এই জীবাশ্মে স্নায়ুতন্ত্র, পরিপাকতন্ত্র ও রক্ত সংবহন ব্যবস্থার প্রতিফলন দেখতে পেয়েছেন—যা এমন প্রাচীন জীবাশ্মে বিরল। ‘মোসুরা’র রক্ত সংবহন ব্যবস্থা ছিল খোলামেলা, অর্থাৎ রক্ত সরাসরি দেহগহ্বরে প্রবাহিত হতো।

মোসুরার মুখ ও শিকার ধরার কৌশল

এর মুখ ছিল পেন্সিল শার্পেনারের মতো, ধারালো প্লেটযুক্ত, যা শিকারের শরীর ছিঁড়ে ফেলতে সক্ষম। সামনের পায়ে ছিল কাঁটা-যুক্ত নখর, যা দিয়ে এটি ছোট প্রাণী ধরত। তবে অন্যান্য রেডিওডন্টদের মতো জালবিশিষ্ট নয় বরং মসৃণ ও কাঁটাযুক্ত কাঠামো ছিল এই নখরে।

আবিষ্কারের পেছনের গল্প

প্রথম মোসুরা জীবাশ্মটি ২০ শতকের শুরুর দিকে বিজ্ঞানী চার্লস ওয়ালকট আবিষ্কার করেন, তবে তা নিয়ে গবেষণা হয়নি। ১৯৭৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার বার্জেস শেইলে নতুন নমুনাগুলো খুঁজে পাওয়া যায়। এখানকার জীবাশ্ম বিছানাগুলো ক্যামব্রিয়ান যুগের প্রাণীর অতি সংরক্ষিত নিদর্শন সংরক্ষণ করে।

বিজ্ঞানীদের প্রতিক্রিয়া

এই আবিষ্কার প্রমাণ করে যে ক্যামব্রিয়ান যুগে প্রাণীরা শুধু বৈচিত্র্যময়ই নয়, বরং জটিল শারীরিক গঠনের মধ্য দিয়ে বিবর্তিত হচ্ছিল। হার্ভার্ডের প্যালিওন্টোলজিস্ট রুডি লেরোসি-অব্রিল বলেন, “এই ধরনের ট্রাঙ্ক অঞ্চল আমাদের ধারনায় নতুন মাত্রা যোগ করে।”

প্রদর্শনী

‘মোসুরা’ ও অন্যান্য রেডিওডন্টের জীবাশ্ম বর্তমানে রয়্যাল অন্টারিও মিউজিয়ামের ‘ডন অব লাইফ’ প্রদর্শনীতে এবং শিগগিরই ম্যানিটোবা মিউজিয়ামেও প্রদর্শিত হবে।