১৩ জুন ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের আসন্ন বৈঠককে সম্ভাবনাময় টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। রাজনৈতিক সমঝোতা ও জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে এই সাক্ষাৎ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মত তার।
নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার আসন্ন বৈঠক রাজনৈতিক সমঝোতার একটি নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (১০ জুন) ঈদ পরবর্তী সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি জানান, আগামী শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডন সময় সকাল ১১টায় ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বিগত ১৫ বছরের ‘ফ্যাসিস্ট’ শাসনের কারণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “এই ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন কোনও সহজ কাজ নয়। একটা সম্পূর্ণ নষ্ট রাষ্ট্রকে রাতারাতি সুস্থ করে তোলা অসম্ভব। এজন্য সময় ও জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।”
তিনি বলেন, “সবাই যে একই রকম চিন্তা করবেন তা নয়। কিন্তু যার যার জায়গা থেকে সবাই সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন।”
চলমান রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে এই সাক্ষাৎ জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ মোড় আনতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। “গণতন্ত্রের ট্রানজিট পিরিয়ডে আমাদের এমনভাবে কথা বলা উচিত যেন চ্যালেঞ্জের এই সময়টিতে আমাদের অগ্রযাত্রা বিঘ্নিত না হয়,” বলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি আরও বলেন, “এখন জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। আমরা সবাই চাই ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত হোক, রাষ্ট্র পরিচালনায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতির পূর্ণ প্রতিষ্ঠা হোক।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত সময়সূচি সম্পর্কে বিএনপি এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তিনি আশা করেন, বাস্তবতার নিরিখে সরকার সময় বিবেচনা করবে।
রোজা ও ঈদের ঠিক পরপরই নির্বাচন হলে প্রার্থীদের প্রচারণায় কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে বলে মনে করেন ফখরুল। “প্রচণ্ড গরম, ঝড়বৃষ্টি এবং অতিরিক্ত খরচে নির্বাচন পরিচালনা কঠিন হয়ে যাবে। অতীতে বেশিরভাগ জাতীয় নির্বাচনই ডিসেম্বরে বা জানুয়ারিতে হয়েছে, ব্যতিক্রম মাত্র দু’বার,” বলেন তিনি।
ড. ইউনূস-তারেক বৈঠকের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “যদি সব কিছু ঠিকঠাক থাকে, তবে এই সাক্ষাৎ রাজনীতিতে একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। এতে দু’পক্ষের সম্পর্ক সহজ হতে পারে এবং নতুন একটি মাত্রা সৃষ্টি হতে পারে।”
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, “তারা বিশেষ মুহূর্তে দায়িত্ব নিয়েছে। যদিও তাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা কম, তবে আন্তরিকতার অভাব নেই।”
তিনি আরও যোগ করেন, “দেশে নতুন রাজনৈতিক দল ও চিন্তার উত্থান ঘটছে। এই বিভাজনের অবসান ঘটিয়ে রাজনৈতিক ভারসাম্য আনার জন্য এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
জাতির উদ্দেশ্যে একান্ত আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যেতে চাই। কেউ যেন বিভাজনের পরিবেশ তৈরি না করেন, তা দেশের জন্য মারাত্মক হতে পারে।”