১১ জুন , “খেলা বেছে নিন – প্রতিদিন”। এবারের আন্তর্জাতিক খেলা দিবসের প্রতিপাদ্য ২০২৫G
সমাজকাল ডেস্ক:
প্রতিবছর ১১ জুন বিশ্বজুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক খেলা দিবস। খেলাধুলার গুরুত্ব, এর সামাজিক ও মানসিক প্রভাব এবং শিশুর অধিকার হিসেবে খেলার গুরুত্ব তুলে ধরতেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ দিবসটি উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য—”খেলা বেছে নিন – প্রতিদিন”—এই দিবসকে নতুন মাত্রা দিয়েছে, বিশেষ করে আজকের প্রযুক্তিনির্ভর, সংকুচিত জীবনযাপনের বাস্তবতায়।
খেলাধুলা: শুধু বিনোদন নয়, জীবনের মৌলিক অংশ
খেলাধুলা নিছক একটি বিনোদন নয়, বরং এটি মানবিক বিকাশের একটি অপরিহার্য মাধ্যম। এটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাংস্কৃতিক, জাতিগত ও সামাজিক সীমারেখা ভেঙে একটি অভিন্ন প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলে। খেলাধুলার ভাষা সর্বজনীন—যেখানে নেই বিভাজন, বরং আছে ঐক্য ও গৌরবের বোধ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, খেলাধুলা শিশুরা কীভাবে শিখছে, কেমন করে বেড়ে উঠছে এবং কীভাবে বিশ্বকে বুঝছে—এসবেরই গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক। এটি কেবল শরীর সুস্থ রাখে না, বরং সৃজনশীলতা, দলগত কাজ, সহনশীলতা, আত্মবিশ্বাস এবং সংকট মোকাবিলার দক্ষতা বাড়ায়।
শিক্ষায় খেলার ব্যবহার: পাঠ্যবইয়ের বাইরেও শেখার শক্তি
বিশ্বের নানা দেশে খেলা-ভিত্তিক শিক্ষা একটি কার্যকর শিক্ষণ কৌশল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এটি শিশুদের পাঠে আগ্রহ বাড়ায়, তথ্য মনে রাখার ক্ষমতা উন্নত করে এবং শেখাকে করে তুলেছে আনন্দময়। খেলাধুলা একই সঙ্গে শেখার মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে আত্মমর্যাদা ও নেতৃত্বের বীজ বপন করে।
শিশুর অধিকার: খেলার সুযোগ সবার জন্য
জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী, খেলা প্রতিটি শিশুর মৌলিক অধিকার। কিন্তু বাস্তবে সেই অধিকার সকলের ভাগ্যে জোটে না। অনেক শিশু—বিশেষভাবে সক্ষম, কর্মজীবী বা স্কুলবহির্ভূত শিশুরা—এখনো খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
এ বছর বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়ন বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “খেলাধুলার অভাবে শিশুরা মানসিকভাবে বিকাশহীনতায় ভোগে এবং নানা নেতিবাচক অভ্যাসের শিকার হয়। খেলাধুলা শুধু আনন্দের জন্য নয়, এটি শিশুদের আত্মমর্যাদা, আত্মবিশ্বাস ও সামাজিক সম্প্রীতি তৈরির জন্য অপরিহার্য।”
প্রতিপাদ্য ২০২৫: “খেলা বেছে নিন – প্রতিদিন”
চলতি বছরের প্রতিপাদ্য আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়—খেলাকে জীবনের অংশ বানান, কেবল দিবস পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবার ও সংগঠন—সবারই দায়িত্ব, শিশুর জীবনে খেলাকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
এই প্রতিপাদ্য একটি দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক পরিবর্তনের ডাক—যেখানে প্রতিদিনই খেলাধুলা থাকবে শিশুদের রুটিনে, থাকবে মাঠে ছুটে চলা, হাসি, এবং শেখার অফুরন্ত আনন্দ।
শেষ কথা
আন্তর্জাতিক খেলা দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, খেলাধুলা কেবল মাঠে নয়, জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে ছড়িয়ে থাকা মানবিক উন্নয়নের উপাদান। খেলাকে প্রতিদিনের জীবনে অন্তর্ভুক্ত করে আমরা গড়তে পারি সুস্থ, সৃজনশীল ও সংবেদনশীল প্রজন্ম—যাদের হাতে গড়ে উঠবে একটি উদার, সহনশীল, এবং সমৃদ্ধ সমাজ।