সমাজকাল ডেস্ক
কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় যখন গোটা দেশ শোকাহত, তখন নিজের সামাজিক মাধ্যমে এক বড় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এলেন অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। জানালেন, এখন থেকে আর কোনও ছবির প্রিমিয়ারে যোগ দেবেন না—না নিজের, না অন্যের।
প্রিমিয়ারে অনুপস্থিতির সিদ্ধান্ত কেন?
সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক আবেগঘন পোস্টে স্বস্তিকা লেখেন, “আমি এখন থেকে আর কোনও ছবির প্রিমিয়ারে যাব না। নিজের ছবিরও না, পরের ছবিরও না। এমনিও খুব কম যাই। কারণ অনেক। প্রিমিয়ারের গ্ল্যামার বা সংবাদপত্রের কাভারেজ দেখে দর্শক সিনেমা দেখতে যান না। তাঁরা যান টিজার, ট্রেলার, পোস্টার আর কলাকুশলীদের প্রতি আগ্রহ থেকে। তাই এতটা ভিড় এবং কৃত্রিমতা মেনে নেওয়া যায় না।”
চলচ্চিত্রকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব
স্বস্তিকা আক্ষেপ করে লেখেন, “প্রিমিয়ারে প্রায়ই দেখা যায়, ছবির পুরো ইউনিটের মানুষগুলোকে ডাকা হয় না। যারা গরমে গ্লুকোজ এনে দিল, যারা মাঝরাতে পানীয় এনে দিল, তাদের কোনো স্বীকৃতি নেই। অথচ তারাই তো আসল যোদ্ধা। প্রিমিয়ারে তাঁদের ডাকা অনেক বেশি প্রয়োজন।”
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তিক্ততা
অভিনেত্রী জানান, “বাবার সঙ্গে অনেক ছবির স্ক্রিনিংয়ে গিয়েছি, তখন পরিচালক থেকে শুরু করে জামা ইস্ত্রি করা লোকজনও আমন্ত্রিত থাকতেন। এখন শুধু দেখনদারীর যুগ। মিডিয়া আর ইনফ্লুয়েন্সারদের ঠেলাঠেলি, ঠাসাঠাসি, কোনো প্রাইভেসি নেই। সম্প্রতি ট্রেলার লঞ্চে একজন ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় আমাকে। এটা আর সহ্য হয় না। আমি বাউন্সার নিয়ে ঘোরার পক্ষে নই।”
তারকাখ্যাতির গ্ল্যামার নয়, চলচ্চিত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা
স্বস্তিকা বলেন, “আমি যে ছবিতে কাজ করি, সেটির প্রচারে জীবন উজাড় করে দেব। কিন্তু প্রিমিয়ারে এসে এক হাজার বাইট আর হাজার খানেক সেলফি তোলার মানসিকতা আমার নেই। সবার হাতে ফোন, সবাই সাংবাদিক! কে মিডিয়া আর কে ইনফ্লুয়েন্সার বোঝা যায় না।”
স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে বাংলা চলচ্চিত্র অঙ্গনের গ্ল্যামার কেন্দ্রিক সংস্কৃতির ওপর এক কড়া বার্তা। তাঁর বক্তব্য শুধু একজন তারকার নয়, বরং একজন সচেতন শিল্পীর—যিনি চলচ্চিত্রকে ভালোবাসেন এবং সেটির অন্তর্নিহিত মর্যাদা রক্ষা করতে চান।
এ সিদ্ধান্তে চলচ্চিত্রজগতে বিতর্ক তৈরি হলেও, প্রশ্ন উঠবেই—শুধু আলো আর ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোই কি তারকাখ্যাতি, নাকি শিল্পের প্রতি সত্যিকারের দায়বদ্ধতা?