২৩ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
EC

সোমবার আ.লীগের নিবন্ধন বাতিলে ইসির বৈঠক

সমাজকাল প্রতিবেদক :

অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আওয়ামী লীগের যাবতীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার প্রেক্ষাপটে দলটির নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার (১২ মে) বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।

সিইসি বলেন, ‘‘সরকারের সিদ্ধান্তের গেজেট প্রকাশ হলেই কমিশন বৈঠকে বসবে। আমি একা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না—এটার আইন আছে। সরকার কোনো দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করলে নির্বাচন কমিশন কেবল নিবন্ধন বাতিল করতে পারে। এজন্য আলাদা কোনো সরকারি নির্দেশনার প্রয়োজন নেই।’’

তিনি আরও জানান, কমিশনের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

🛑 পটভূমি:
গত শনিবার (১০ মে) জাতীয় নাগরিক কমিটির আন্দোলনের চাপে জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। সেই বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে তা অনুমোদিত হয়। সংশোধনীর আওতায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এখন রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দেওয়ার এখতিয়ার পাবে।

এই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে, ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিরুদ্ধে দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং সংশ্লিষ্ট সাক্ষীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় এনে দলটির সাইবার স্পেসসহ সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

🔍 পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
সোমবারের কমিশন বৈঠকে গেজেট প্রকাশিত হওয়ার পর পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ হিসেবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন মোড় আসতে চলেছে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার দাবি জোরালোভাবে উঠে এসেছে ছাত্র-জনতা ও জুলাই আন্দোলনের তরফ থেকে। আন্দোলনকারীরা দলটির বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের সহায়তা এবং দীর্ঘদিনের দমন-পীড়নের অভিযোগ তুলে তাৎক্ষণিক নিষেধাজ্ঞার দাবি জানায়।

এই দাবির প্রেক্ষিতে গতকাল (১০ মে) অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক জরুরি বৈঠক বসে। বৈঠকে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টারা। ওই রাতেই আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে।

তিনি বলেন, “দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার স্বার্থে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে আওয়ামী লীগের সাইবার স্পেসসহ সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, এই নিষেধাজ্ঞার গেজেট প্রকাশ করা হবে পরবর্তী কর্মদিবসে এবং এর ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

📜 গেজেট ও ঘোষণাপত্র:
বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয় যে, আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করা হবে। এই ঘোষণাপত্রেই অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক রূপরেখা এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার কাঠামো নির্ধারিত হবে।

🗳️ নির্বাচন কমিশনের করণীয়:
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের অনুমোদনাধীন। কিন্তু যদি কোনো রাজনৈতিক দল সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ হয় বা জাতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়—তাহলে কমিশনের এখতিয়ারে সেই দলের নিবন্ধন বাতিল করা সম্ভব।