নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশে নির্বাচন ও রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি উঠছে চারদিকে। তবে শাহবাগে আজকের ‘শহীদী সমাবেশে’ সেই দাবির সামনে দাঁড়িয়ে গর্জে উঠলেন শহীদদের স্বজনরা—সংস্কার বা নির্বাচন নয়, আগে চাই বিচার।
রাজধানীর শাহবাগে আজ শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) ‘জুলাই, পিলখানা, শাপলা গণহত্যার বিচার এবং গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের দাবিতে’ এক সমাবেশের আয়োজন করে ইনকিলাব মঞ্চ। এই সমাবেশে শহীদ পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি রাজনৈতিক সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আপ-বাংলাদেশ ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির নেতারাও বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত শহীদ ইমাম হাসানের ভাই রবিউল আউয়াল বলেন,
“এ সরকার ক্ষমতায় থেকে আমাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করছে। বাংলাদেশে সংস্কার ও নির্বাচন হবেই, তবে তার আগে বিচার চাই। বিচারই সংস্কারের মূল।”
শহীদ সাইমের মা, যিনি নিজ সন্তানকে যাত্রাবাড়ীতে হারিয়েছেন, কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন,
“আমার ছেলের কোনো দোষ ছিল না। সে আন্দোলন করেছিল, অস্ত্র তো ছিল না। আজও বিচার পাইনি। হাসিনাকে দেশে এনে যেন ফাঁসি দেওয়া হয়।”
সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম বলেন,
“আমার সন্তানকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এক পায়ে মাংস ছিল না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। না হলে দেশের শত শত মা পথে নামবে।”
২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত মেজর তানভীর হায়দার নূরের স্ত্রী তাসনূভা মাহা বলেন,
“আমার স্বামীর লাশ আমি আজও পাইনি। সেদিন আমাদের বাড়িতে হিন্দিভাষী লোক ঢুকেছিল। সন্তানদের কাপড় খুলে দেখেছিল ছেলে না মেয়ে।”
সোহেল রানার ভাই বলেন,
“আমার ভাইকে রায়েরবাজারে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। আজও জানি না, কোনটা তার কবর। অন্তর্বর্তী সরকার ডিএনএ টেস্ট পর্যন্ত করেনি।”
সমাবেশে আপ-বাংলাদেশের সংগঠক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন,
“গণহত্যাকারীদের নিষিদ্ধ করতে আজ আমরা মাঠে। যতদিন বাঁচি, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে না।”
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন,
“নির্বাচন না সংস্কার—এই খেলা থামান। আগে বিচার নিশ্চিত করুন। শহীদদের হত্যাকাণ্ডের বিচার ছাড়া এই দেশে কিছুই প্রাসঙ্গিক নয়।”
সমাবেশ জুড়ে একটাই আহ্বান—আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং বিচার সম্পন্ন করতে হবে। শহীদদের স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছিল শাহবাগের বাতাস, আর জনগণের ক্ষোভে ফুটে উঠেছিল—বিচারহীন সংস্কার মানি না।