সংবিধানে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা অন্তর্ভুক্তের সুপারিশ স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের
সমাজকাল প্রতিবেদক:
(উপশিরোনাম: স্বাস্থ্যকে মৌলিক অধিকার ঘোষণা, নতুন আইন, জাতীয় কমিশন ও স্বাস্থ্য নেটওয়ার্ক গঠনের সুপারিশ)
স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে কমিশনের পক্ষ থেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশসহ মোট ৩২টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব
প্রতিবেদনের মুখ্য সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সংবিধানের মাধ্যমে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এই সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য পৃথক ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আইন’ প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে, যা নাগরিকের অধিকার ও রাষ্ট্রের কর্তব্য নির্ধারণ করবে।
স্বাস্থ্যখাতে আইনি সংস্কার ও নতুন আইন
প্রতিবেদনে ১৫টিরও বেশি নতুন স্বাস্থ্য আইন প্রণয়নের পাশাপাশি কয়েকটি বিদ্যমান আইন সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন আইন
- স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ও রোগী নিরাপত্তা আইন
- ওষুধের মূল্য ও প্রাপ্যতা আইন
- ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ আইন
- শিশু বিকাশ কেন্দ্র আইন
স্বাস্থ্য তথ্য সুরক্ষা আইন
এছাড়া সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে: বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন, ফার্মেসি কাউন্সিল আইন ইত্যাদি।
জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন ও হেলথ সার্ভিস গঠনের প্রস্তাব
কমিশন একটি স্বাধীন ও স্থায়ী ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন’ গঠনের সুপারিশ করেছে, যা সরকারের নীতিনির্ধারণে কৌশলগত পরামর্শ ও মানদণ্ড নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া বিদ্যমান স্বাস্থ্য ক্যাডার, প্রশাসন ও মন্ত্রণালয়ের জনবল নিয়ে নতুন ‘বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস (BHS)’ নামে পেশাভিত্তিক সিভিল সার্ভিস গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
নিয়োগের স্বচ্ছতা ও জনস্বাস্থ্য কাঠামো
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে একটি স্বতন্ত্র পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠন করা জরুরি। পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে সেকেন্ডারি ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিশ্বমানের টারশিয়ারি হাসপাতাল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিনামূল্যে ওষুধ ও জরুরি সেবার নীতিমালা
অত্যাবশ্যকীয় ওষুধকে মৌলিক স্বাস্থ্য অধিকার ঘোষণা করে সরকারি ফার্মেসি ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার কথা বলা হয়। ক্যানসার, ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনের ওষুধের ওপর শুল্ক শূন্য করার প্রস্তাব আসে।
জরুরি চিকিৎসাকে স্বীকৃত চিকিৎসা বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং তার পরিসর বৃদ্ধির সুপারিশও করা হয়।
ডিজিটাল নেটওয়ার্ক ও অভিযোগ নিষ্পত্তি
জাতীয় অ্যাম্বুলেন্স, রক্ত সঞ্চালন, ল্যাব ও ফার্মেসি সেবা নেটওয়ার্ক গঠন করে একটি একীভূত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেবাগ্রহীতার অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য একটি আধুনিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালুর সুপারিশও এসেছে।
এই প্রতিবেদন সরকারের স্বাস্থ্য খাতে কাঠামোগত সংস্কার এবং জনস্বাস্থ্যের সর্বজনীনতা নিশ্চিত করার একটি সুপরিকল্পিত রূপরেখা বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।