রেকর্ড বৃষ্টি: দিল্লিতে প্রাণহানী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে
সমাজকাল ডেস্ক:
মৌসুমের শুরুতেই রেকর্ড বৃষ্টিতে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লির জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অঞ্চলটির আশপাশের বহু নিচু এলাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। বৃষ্টিপাতজনিত দুর্ঘটনার কবলে কমপক্ষে ১১ জনের প্রাণহানীর খবর পাওয়া গেছে।
গত শুক্রবার (২৮ জুন) থেকে দিল্লিতে রেকর্ড-ভাঙা এ বৃষ্টি শুরু হয়েছে, যা আজ রবিবার পর্যন্ত চলছে। টানা তিন দিন ধরে চলা এ বৃষ্টিতে প্রাণহানীর সংখ্যা বেড়ে ১১জনে দাঁড়িয়েছে।
দেশটির কর্মকর্তারা আজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন আজ এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, দিল্লির বসন্ত বিহার এলাকায় গতকাল শনিবার নির্মাণাধীন একটি সাইটের ধসে পড়া দেয়ালের ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে তিন শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার নির্মাণাধীন ভবনের দেয়ালটি ধসে পড়ে। স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে দিল্লির ফায়ার সার্ভসকে(ডিএফএস) এ দুর্ঘটনার খবর জানানো হয়।
ডিএফএস কর্মকর্তারা বলেছেন, ধ্বংসস্তপের নিচ থেকে তিন শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরিচয় শণাক্ত হওয়া নিহতরা হলেন- সন্তোষ কুমার যাদব (১৯), সন্তোষ কুমার (২০) এবং দয়ারাম(৪৫)। দয়ারামের স্ত্রী তার সঙ্গেই ওই সাইটে কাজ করতেন। তারা আরও জানান, পরে জাতীয় দুর্যাগ ব্যবস্থাপনা বাহিনী ও স্থানীয় বেসরকারী সংস্থাগুলোর কর্মীরা যৌথভাবে এ উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে।
কুমারের আত্মীয় সত্যায়ন বলেছেন, বিহারের সুপলে থাকা দরিদ্র বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন সন্তোষ কুমার। আরেক সন্তোষও সুপল থেকেই কাজের জন্য দিল্লিতে এসেছিল। সে তার দুই ভাই ও বাবা-মাকে রেখে এখানে কাজ করতে আসে। এদিকে দয়ারাম উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসির বাসিন্দা ছিলেন। তার দুই ছেলে পরিবারসহ ইউপিতে থাকে।
স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নির্মাণাধীন ওই প্লটে বাড়ি তৈরির জন্য বেসমেন্ট তৈরির কাজ চলছিল। এ দুর্ঘটনায় ঠিকাদার ও প্লটের মালিককে এরইমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ঘটনাটির তদন্ত চলছে।
এদিকে শনিবার দিল্লির সিরাসপুর এলাকায় বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া আন্ডারপাসের মধ্যে ডুবে দুই শিশু প্রাণ হারিয়েছে। এর আগের দিন শুক্রবার বৃষ্টিজনিত দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ছয়জনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে একজন ক্যাব চালক রয়েছেন, যিনি দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি ছাউনি ধসে পড়ায় মারা যান। এছাড়াও রোহনীর প্রেম নগর এলাকায় বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে ৩৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি এবং নিউ উসমানপুর, শালিমার বাগ এবং ওখালা বাণিজ্যিক এলাকায় পানিতে ডুবে চারজন প্রাণ হারিয়েছে।
অপর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লিতে গড়ে প্রায় ৬৫০ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টিপাত হয়, কিন্তু শুক্রবার দিল্লিতে ২২৮ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন কোটি জনসংখ্যার এ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ আন্ডারপাস প্রগতি ময়দান টানেল বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়। গতকালও আন্ডারপাসটি বন্ধ থাকার খবর পাওয়া গেছে। দিল্লিতে আজ ও আগামীকাল সোমবার ভারি বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
শুক্রবার থেকে জলাবদ্ধতার কারণে দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক যানজট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এদিন সকাল থেকেই দেশটির টেলিভিশনে জলমগ্ন আন্ডারপাসগুলোতে যানবাহন আটকে থাকার দৃশ্য দেখা যায়। এর মধ্যে ডুবে যাওয়া সড়কগুলো দিয়ে লোকজনের পানি ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার দৃশ্যও ছিল । কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই বৃষ্টিজনিত কারণে ঘটা মৃত্যুর খবর আসতে থাকে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মৌসুমি বায়ুর প্রভাব চলাকালে দিল্লিতে গড়ে প্রায় ৬৫০ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টিপাত হয়, কিন্তু এবারই প্রথম একদিনেই এক তৃতীয়াংশ বৃষ্টির রেকর্ড ছুঁয়েছে দিল্লি।