রাশিয়ার ভয়াবহ ড্রোন হামলায় ইউক্রেনে নিহত ১৪। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আমেরিকার নীরবতাকে দায়ী করেছেন। জানুন হামলার প্রেক্ষাপট ও কূটনৈতিক সংকট বিশ্লেষণ।
সমাজকাল ডেস্ক:
রাশিয়ার চালানো এক বিশাল ড্রোন হামলায় কেঁপে উঠেছে ইউক্রেন। শনিবার দিবাগত রাতভর চলা এই আক্রমণে কমপক্ষে ১৪ জন নিহত এবং আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ। রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয় বহু ড্রোন, যা যুদ্ধ শুরুর পর এক রাতের মধ্যে হওয়া অন্যতম ভয়াবহ হামলা বলে বিবেচিত হচ্ছে।
এ হামলার ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের নীরব অবস্থানকে তীব্র সমালোচনা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, “আমেরিকার নীরবতা কেবল পুতিনকে আরও উৎসাহিত করছে। শক্তিশালী আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া রাশিয়ার এই নিষ্ঠুরতা থামানো সম্ভব নয়।”
যুদ্ধের তিন বছর
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনের ভূখণ্ডে পূর্ণমাত্রার সামরিক হামলা শুরু করে। সেই হামলার পর থেকে ইউক্রেনের পূর্ব এবং দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এর মধ্যে রয়েছে ক্রিমিয়া, যেটি ২০১৪ সালেই একতরফাভাবে সংযুক্ত করে নেয় রাশিয়া।
বর্তমান যুদ্ধের অবসানে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন সময় শান্তি আলোচনা ও যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হননি। বরং মস্কোর সামরিক কার্যক্রম আরও সক্রিয় হয়েছে বলে মন্তব্য করছেন বিশ্লেষকরা।
কিয়েভে হামলার তাৎপর্য
দিবাগত রাতভর চালানো এই হামলা ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে ব্যস্ত করে তোলে। মূলত ড্রোনের মাধ্যমে আকাশপথে চালানো এই তাণ্ডবের ফলে বেসামরিক লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ইউক্রেনীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা সত্ত্বেও কিছু ড্রোন লক্ষ্যে আঘাত হানে, যার ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক সংকট
রাশিয়ার এই হামলা নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে এনেছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের ভূমিকাকে। ইউক্রেন দাবি করে আসছে, রাশিয়ার আগ্রাসন থামাতে কেবল অস্ত্র সহায়তা যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন সরাসরি কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ।
জেলেনস্কি তার সাম্প্রতিক বিবৃতিতে বলেন, “শান্তির পথে অগ্রসর হতে হলে প্রথমে পুতিনকে সংযত করতে হবে। এর জন্য আমেরিকাসহ বিশ্বনেতাদের আরও সক্রিয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।”
ইউক্রেন যুদ্ধ কোন দিকে যাচ্ছে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, তিন বছর ধরে চলমান এই যুদ্ধ ইতোমধ্যেই ইউরোপের নিরাপত্তা কাঠামোকে বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। পশ্চিমা জোট ও ন্যাটোর কৌশলগত অবস্থান, রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান—সব মিলিয়ে এই যুদ্ধ বিশ্বের বড় পরাশক্তিগুলোর প্রভাব ও স্বার্থের প্রকাশ্য মঞ্চে পরিণত হয়েছে।
যুদ্ধ থামাতে কোনও কার্যকর কূটনৈতিক রূপরেখা এখনো দৃশ্যমান নয়, আর ততদিন পর্যন্ত সাধারণ ইউক্রেনীয় নাগরিকরাই এর প্রধান ভুক্তভোগী হয়ে থাকবেন।