২১ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশ্বব্যাপী প্রবাল প্রাচীরে ভয়াবহ ক্ষতি : ৮৪% প্রবাল ব্লিচিংয়ের শিকার

সমাজকাল ডেস্ক :

বিশ্বের সমুদ্রের প্রবাল প্রাচীরগুলোর ৮৪ শতাংশই বর্তমানে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ব্লিচিংয়ের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কোরাল রিফ ইনিশিয়েটিভ (ICRI)। বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, এটি এখন পর্যন্ত রেকর্ডকৃত প্রবাল ব্লিচিংয়ের সবচেয়ে ব্যাপক ও মারাত্মক ঘটনা।

এটি ১৯৯৮ সালের পর চতুর্থ বৈশ্বিক ব্লিচিং ইভেন্ট হলেও এবার ২০১৪-১৭ সালের ঘটনার চেয়েও ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে, যখন দুই-তৃতীয়াংশ প্রবাল প্রাচীর আক্রান্ত হয়েছিল। বর্তমান সংকট ২০২৩ সালে শুরু হয় এবং এখনও চলছে, যার মূল কারণ হিসেবে সমুদ্রের ক্রমবর্ধমান উষ্ণতাকে দায়ী করা হয়েছে।

‘সমুদ্রের চেহারাই বদলে যাচ্ছে’

ইন্টারন্যাশনাল কোরাল রিফ সোসাইটির প্রতিনিধি এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাসাগর ও বায়ুমণ্ডল প্রশাসন (NOAA)-এর সাবেক প্রবাল পর্যবেক্ষক প্রধান মার্ক ইকিন বলেন,

“আমরা এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি, যেখানে ভবিষ্যতে হয়তো কখনোই সমুদ্রের উষ্ণতা ব্লিচিংয়ের সীমার নিচে নামবে না। আমাদের মহাসাগরের জীবন ও জীবিকা রক্ষার ক্ষমতা চরমভাবে হুমকির মুখে।”

২০২৪ সাল ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বছর। সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ছিল রেকর্ড ২০.৮৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৬৯.৫৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট)।

প্রবাল প্রাচীরগুলো শুধু সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের আঁতুড়ঘর নয়, এরা মাছধরা, উপকূলীয় সুরক্ষা এবং পর্যটনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় ২৫% সামুদ্রিক প্রাণী সরাসরি বা পরোক্ষভাবে প্রবাল প্রাচীরের ওপর নির্ভরশীল।

কেন ব্লিচিং হয়?

প্রবাল তাদের রঙ পায় ভেতরের শৈবাল (algae) থেকে, যা খাদ্য সরবরাহ করে। দীর্ঘমেয়াদী উষ্ণতা শৈবাল থেকে বিষাক্ত যৌগ নির্গত করে, ফলে প্রবাল বাধ্য হয় শৈবাল বের করে দিতে। এতে প্রবালের উজ্জ্বল রঙ হারিয়ে সাদা হাড়ের মতো কঙ্কাল পড়ে থাকে এবং প্রবালের মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।

এই পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে NOAA তাদের প্রবাল ব্লিচিং সতর্কতা স্কেল সম্প্রসারণ করতে বাধ্য হয়েছে।

রক্ষায় চলমান উদ্যোগ

বিশ্বজুড়ে প্রবাল সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের নানা প্রচেষ্টা চলছে। ডাচ গবেষকরা সেশেলসের উপকূল থেকে সংগৃহীত প্রবাল টুকরো দিয়ে ল্যাবরেটরিতে প্রবাল পুনর্জন্ম ঘটানোর কাজ করছেন। ফ্লোরিডার উপকূলে বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে গরমে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাল উদ্ধার করে সুস্থ করে সমুদ্রে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলছেন, মূল সমাধান হলো গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো।

মার্ক ইকিন বলেন,

“প্রবাল রক্ষার সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হলো জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণের মোকাবিলা করা — অর্থাৎ জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো কমানো। বাকিগুলো আসলে ক্ষণিকের মরিচিকা।”

গ্লোবাল কোরাল রিফ মনিটরিং নেটওয়ার্কের ক্যারিবিয়ান স্টিয়ারিং কমিটির সহ-সভাপতি মেলানি ম্যাকফিল্ড বলেন,

“মানুষকে বুঝতে হবে, এই বিষয়ে নিষ্ক্রিয়তা মানেই প্রবাল প্রাচীরের মৃত্যু নিশ্চিত করা।”

জ্বালানির প্রসারে সরকারের ভূমিকা

এই ভয়াবহ প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রসার এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি কর্মসূচি বাতিলের দিকে এগিয়ে গেছেন, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাকে আরও কঠিন করে তুলছে।

মার্ক ইকিন কটাক্ষ করে বলেন,

“বর্তমান সরকার পরিবেশ সুরক্ষার বদলে ব্যবস্থা ভেঙে ফেলতে কাজ করছে। এর ফলাফল হবে ভয়াবহ।”