বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ আদর্শ গন্তব্য : ড. মুহাম্মদ ইউনূস, চীন-বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার উপযুক্ততম স্থান। সংস্কারমূলক উদ্যোগে চলছে রূপান্তরের প্রস্তুতি।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কার্যালয়ে আয়োজিত চীন–বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস রবিবার (১ জুন) বলেছেন, “বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক কেন্দ্র হতে চলেছে। আমাদের ডাইনামিক জনশক্তি ও ভৌগলিক অবস্থান বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য তৈরি করেছে।”
ড. ইউনূস বলেন, “দীর্ঘদিন আমাদের দেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রত্যাশিত হারে আসেনি। যদিও বেশ কিছু অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছিল, অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো পড়ে ছিল অকার্যকর। দুর্নীতি ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসন বিনিয়োগকারীদের বিমুখ করেছিল। কিন্তু এখন চিত্র বদলেছে। লাখ লাখ তরুণের অংশগ্রহণে সংঘটিত জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশকে নতুন পথে পরিচালিত করছে।”
তিনি জানান, “বর্তমানে বাংলাদেশ এক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতকে অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নীতিগত সংস্কার শুরু হয়েছে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে সরকার শুরু থেকেই সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।”
চীন থেকে আগত বৃহৎ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “বেইজিং সফরে চীনের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমি সম্মানিত বোধ করছি, এত দ্রুত এমন একটি বড় প্রতিনিধিদল দেশে এসেছে। একটি চীনা টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান এ সম্মেলনেই ১০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ঘোষণা দিয়েছে।”
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের পাট, জামদানি ও মসলিন শুধু ঐতিহ্যের অংশ নয়—এগুলোকে আধুনিক শিল্পে রূপান্তরের মাধ্যমে আমরা বিশ্ববাজারে নতুন করে উপস্থাপন করতে পারি। পাট আর শুধু বস্তার উপকরণ নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের পরিবেশবান্ধব পণ্যের সম্ভাব্য উৎস।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আজকের বাংলাদেশ আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখতে চায় এবং সেই সক্ষমতাও আমাদের আছে। আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে বিনিয়োগই মূল চালিকা শক্তি। বাংলাদেশে বিনিয়োগ মানে শুধু অর্থনৈতিক লাভ নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক রূপান্তরের অংশ হয়ে ওঠা।”
তিনি চীনা উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “বাংলাদেশকে নিজেদের দ্বিতীয় ঘর হিসেবে গড়ে তুলুন। আমরা আপনাদের প্রকৃত অংশীদার হতে চাই। আমাদের লক্ষ লক্ষ তরুণের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে এই বিনিয়োগ অপরিহার্য।”