নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিচারের জন্য ঘুরতে ঘুরতে মানুষের জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা। হিন্দু-বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানদের অধিকার সুরক্ষায় কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ নাথ। জবাবে বিচারপ্রার্থীদের কষ্ট লাঘবের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
আজ রবিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে আইন মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আইন বড়লোকের জন্য। আইনকে শাসন করে অর্থ বিত্তশালীরা, আইন প্রয়োগ হয় সাধারণ গরীব মানুষের ওপর। বিচারের জন্য এই দরজা, ওই দরজায় ঘুরতে ঘুরতে মানুষের জীবন শেষ। বিচারকের অভাব রয়েছে। তাই সরকারের ইচ্ছা সত্ত্বেও বিচার কাজ বিলম্বিত হয়। তিনি প্রতিটি বিভাগে হাইকোর্টের বেঞ্চ করার দাবি জানান।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ নাথ বলেন, বঙ্কিমচন্দ্র তার উক্তিতে বলে গেছেন- ‘আইন! সে তো তামাশা মাত্র। বড়লোকেরাই কেবল পয়সা খরচ করিয়া সেই তামাশা দেখিতে পারে।’ আমি তা বলতে চাই না। গত ১৫ বছরের যুদ্ধপরাধীদের বিচার হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর বিচার হয়েছে। কিন্তু প্রতিকারহীন অপরাধে বিচারের বাণী যেন নিরবে নিভৃতে না কাঁদে। তিনি বলেন, আমার এলাকার গরীব আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক সরদার হত্যা মামলার চার্জশীর্ট দিতে ৮ বছর লাগলো। চার্জশীর্ট গ্রহণ করা হলেও অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, বিগত দুইটি নির্বাচনে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষায় কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলো, তারপরও মাননীয় মন্ত্রী আপনি কেন পারছেন না? হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টানসহ অন্যান্যদের সুরক্ষায় আমরা কেন একটি বিশেষ আইন করতে পারছি না?
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, সুন্দর সুন্দর ভবন হয়েছে। কিন্তু লাখ লাখ মানুষ আদালতে ঘুরছেন। মামলাজট বাড়ছে। বিচারপ্রার্থীদের কষ্ট লাঘবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
জবাবে আইন আনিসুল হক বলেন, সংসদ সদস্য যারা ছাঁটাই প্রস্তাব করেছেন, তারা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত কথা বলেছেন, মামলা জটের কথা বলেছেন, মামলা জটের কথা অস্বীকার করার কিছু নেই। আজকের হিসাব হচ্ছে, ৪১ লাখ ৯ হাজার ৭৫৫টি মামলা কোর্টে আছে। তিনি আরো বলেন, যতগুলো মামলা আছে তার নিষ্পত্তি করার জন্য বিচার বিভাগে যে বিচারক আছে তা অপ্রতুল। ২০০৯ সালে জুডিশিয়ারির সক্ষমতা ছিল ৮০০ বিচারক। আজকে সেই জুডিশিয়ারির সক্ষমতা হচ্ছে প্রায় ২ হাজার বিচারক। আমরা আরও আদালত বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব দিয়ে রেখেছি। ১৫৮টি আদালত খুব শীগ্রই বেড়ে যাবে।
মামলা জট নিরসনে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে আইন মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প নিয়ে ৬৪ জেলায় এই চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেসি এবং চিফ মেট্রোপলিপন ম্যাজিট্রেসি কোর্ট স্থাপনের পরিকল্পনা নেন। তার মধ্যে ৪১ টা হয়ে গেছে, ২৩ হচ্ছে এবং খুব শীগ্রই হয়ে যাবে।
ছাঁটাই প্রস্তাব গ্রহণ করতে না পারার যুক্তি তুলে ধরে আনিসুল ইসলাম বলেন যে, ২ হাজার ২২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, ওনারা বলেছেন ১টাকায় নিয়ে আসতে, ১ টাকায় আনলে আমি কিন্তু এগুলো করতে পারবো না। আমার ২ হাজার ২২ কোটি টাকাই লাগবে। আমি এক টাকায় কিছু করতে পারবো না। কিন্তু আপনাদের এই কথা বলে দিতে পারি, এই ২ হাজার ২২ কোটি টাকা দিয়ে যতটুকু সম্ভব এই দুঃখী মামলা যারা করেন তাদের কষ্ট নিবারণ করার চেষ্টা আমি করবো।