ফ্রান্সে আগাম নির্বাচনে ভোট গ্রহণ, কট্টর ডানপন্থীদের জয়ের আভাস
সমাজাকাল ডেস্ক:
ফ্রান্সের আগাম জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। জাতীয় পরিষদের ৫৭৭ সদস্যকে নির্বাচন করতে আজ রবিবার ভোট দিচ্ছেন ফরাসী জনগন।
এ নির্বাচন ঘিরে পরিচালিত জনমত জরিপ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের আধুনিক রাজনীতিতে ইতিহাস গড়ে এবার ক্ষমতার খুব কাছাকাছি রয়েছে কট্টর ডানপন্থীরা।
সবগুলো জরিপেই বেশ এগিয়ে রয়েছে দেশটির অতি ডানপন্থী রাজনীতিবিদ মেরিন লা পেন এবং জর্দান বারদেলার দল ‘ন্যাশনাল র্যালি’ (আরএন)।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম আজ প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের বেশির ভাগ অঞ্চলে আজ রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া প্রথম দফার এ ভোট গ্রহণ চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। তবে রাজধানী প্যারিসসহ আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে সন্ধ্য ৬টা পর্যন্ত চলবে এ ভোট।
ধারণা করা হচ্ছে, এবারের নির্বাচনে দেশটির অতি ডানপন্থী পার্টি ন্যাশনাল র্যালি ক্ষমতায় আসবে। তবে দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জরিপ পূর্বাভাস সত্য হলে ফ্রান্সে এবার ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠন হবে।
নির্বাচন পূর্ববর্তী জনমত জরিপগুলোতে দেখা গেছে, প্রথম দফার নির্বাচনে মেরিন লা পেনের নেতৃত্বাধীন কট্টর ডানপন্থী দল ‘ন্যাশনাল র্যালি’ পেতে পারে ৩৩ থেকে ৩৬ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ, ‘আরএন’ দল এগিয়ে থাকলেও পার্লামেন্ট নিয়ন্ত্রণে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না । জরিপের দাবি, দেশটির বামপন্থী দল ‘নিউ পপুলার ফ্রন্ট’ রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। তারা পেতে পারে ২৮ থেকে ২৯ শতাংশ ভোট। এদিকে ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোর মধ্যপন্থি জোট ‘এনসাম্বল অ্যালায়েন্স’ পেতে পারে ২০ থেকে ২৩ শতাংশ ভোট।
সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী, ফ্রান্সের জাতীয় পরিষদের নির্বাচন সাধারণত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু গত দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে এবারই প্রথম প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দেশটিতে জাতীয় পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে নিজের মধ্যপন্থী দল বাজে ফল করায় ৯ জুন সরকার ভেঙ্গে দিয়ে দ্রুত আগাম জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ম্যাঁক্রো, যা তার ঘনিষ্ঠ মিত্রদেরও বিস্মিত করেছে। নিয়ম অনুযায়ী, আগামী ২০২৭ সালের আগে ফ্রান্সে কোন নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল না। কিন্তু প্রেসিডেন্ট আগাম নির্বাচনের ডাক দেওয়ায় প্রথম দফার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ। দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণ হবে ৭ জুলাই।
আশা করা হচ্ছে, এবারের নির্বাচনে ফ্রান্সের প্রায় ৪ কোটি ৯০ লাখ ভোটার ভোট দেবেন।
ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ফ্রান্স। দেশটির প্রেসিডেন্ট ম্যাঁক্রো ইউরোপের প্রভাবশালী নেতাদের একজন। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ম্যাঁক্রোর কাছে পরাজিত হন মেরিন লা পেন। আধুনীক ফরাসী রাজনীতির কট্টর এই নেতা মনে করেন, এবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ন্যাশনাল র্যালি যদি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তাহলে দলের ২৮ বছর বয়সী নেতা জর্দান বারদেলা ফ্রান্সের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন।
চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ফ্রান্সে জ্বালানি ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য এবং খাদ্যের দাম বেড়েছে অনেক বেশি। তাই সাধারণ ফরাসী জনগন এবার আরএনের দিকে বেশি ঝুঁকেছে। দলটি এবার জয়ী হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো ফ্রান্সে কট্টর ডানপন্থীরা ক্ষমতায় আসার রেকর্ড গড়বে।
প্রসঙ্গত, ফ্রান্সে পার্লামেন্টের জাতীয় পরিষদের ৫৭৭টি আসনের জন্য দুই দফায় ভোট গ্রহণ হয়ে থাকে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য একটি দলকে কমপক্ষে ২৮৯টি আসন পেতে হয়। আগামী ৭ জুলাই দ্বিতীয় দফার ভোট অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত ফলাফল জানা যাবে না।