২ জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংগ্রহ ইউএনইএপ

প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা বাড়ছে, ২০৬০ সাল নাগাদ ৩ গুন হবে

প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা বিশ্বজুড়ে বাড়ছে। ২০৬০ সালের মধ্যে এই হার তিনগুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। প্লাস্টিক দূষণ রোধে বিশ্বজুড়ে কার্যকর পদক্ষেপের ডাক ইউএনইএপের।  প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনায় বৃত্তাকার অর্থনীতির দিকে নিয়ে যেতে নীতিগত ও প্রযুক্তিগত উদ্যোগ নিচ্ছে। কীভাবে এই পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব, তা নিয়েই এই প্রতিবেদন।

 সমাজকাল ডেস্ক:

প্লাস্টিক আমাদের আধুনিক জীবনে এক অবিচ্ছেদ্য উপাদান। খাদ্যপ্যাকেজিং, চিকিৎসা সামগ্রী, ইলেকট্রনিকস, যানবাহন থেকে শুরু করে দৈনন্দিন নানা কাজে এর ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। তবে এর পাশাপাশি এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জও বিশ্ববাসীর সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে—প্লাস্টিক দূষণ।

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি ইএনইএপ জানিয়েছে, ২০০০ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিক উৎপাদন এবং বর্জ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। গবেষণা বলছে, বর্তমানে যেভাবে প্লাস্টিক ব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত হচ্ছে, তা যদি অব্যাহত থাকে তবে ২০৬০ সালের মধ্যে এই হার তিনগুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে পরিবেশের ওপর চাপ যেমন বাড়ছে, তেমনি মানবস্বাস্থ্যের জন্যও তৈরি হচ্ছে মারাত্মক ঝুঁকি।

বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহ চিত্র

বিশ্বের মহাসাগরগুলোতে প্রতিবছর প্রায় এক কোটি টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হচ্ছে। এর ফলে সামুদ্রিক প্রাণী, বিশেষত মাছ, কচ্ছপ, তিমি ও সামুদ্রিক পাখির জীবন বিপন্ন হচ্ছে। অনেক সময়ে এই প্রাণীরা পরোক্ষভাবে মানুষের খাদ্যচক্রে ফিরে আসে, যার ফলে মানুষের শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিক জমা হচ্ছে বলে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় উঠে এসেছে।

শুধু সমুদ্র নয়, ভূগর্ভস্থ পানি, নদী, বৃষ্টির ফোঁটা এমনকি গর্ভবতী নারীর রক্তে পর্যন্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে বলে সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো জানায়। এসব তথ্য নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কতটা নিরাপদ?

ইউএনইএপ এর পদক্ষেপ: বৃত্তাকার অর্থনীতির দিকে যাত্রা

এই সংকট মোকাবেলায় ইউএনইএপ (United Nations Environment Programme) নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। সংস্থাটি প্লাস্টিক দূষণ বিষয়ে আন্তঃসরকারি আলোচনার কমিটির সেক্রেটারিয়েটের হোস্ট হিসেবে বিশ্বজুড়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাদের লক্ষ্য—একটি ‘বৃত্তাকার অর্থনীতি’ গড়ে তোলা, যেখানে প্লাস্টিক ব্যবহার কমিয়ে পুনর্ব্যবহার ও পুনরায় চক্রায়ন (recycle) নিশ্চিত করা যাবে।

এই প্রক্রিয়ায় ইউএনইএপ বিভিন্ন দেশের সরকার, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সুশীল সমাজ এবং নাগরিকদের সম্পৃক্ত করছে। তাদের কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত করছে:

আইনগত কাঠামো শক্তিশালীকরণ,উদ্ভাবনী সমাধান ও প্রযুক্তি ব্যবহার, আচরণগত পরিবর্তন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ, অর্থায়ন ও বিনিয়োগে সহায়তা প্রদান, পরিকল্পনা ও পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করা।

ইউএনইএপ বিশ্বাস করে, প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনায় সিস্টেমিক পরিবর্তন আনতেই হবে—খণ্ডিত নয়, বরং পূর্ণাঙ্গ সমন্বিত পদ্ধতির মাধ্যমে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

পরিবেশ বিশ্লেষকরা বলছেন, প্লাস্টিক দূষণ এখন আর কেবল পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি একটি বৈশ্বিক নিরাপত্তা সমস্যা। স্বাস্থ্য, জলবায়ু, খাদ্যনিরাপত্তা—সবকিছুই এর সঙ্গে জড়িত। এক্ষেত্রে কেবল প্রযুক্তিনির্ভর সমাধানে নয়, বরং নীতিমালার রূপান্তর, উৎপাদন চক্রে স্বচ্ছতা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি দীর্ঘমেয়াদি কাঠামো তৈরি করাই একমাত্র পথ।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস (৫ জুন) উপলক্ষে ইউএনইএপ -এর এ ধরনের পদক্ষেপকে বিশ্বজুড়ে পরিবেশবাদীরা স্বাগত জানাচ্ছেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
X
LinkedIn