সমাজকাল প্রতিবেদক :
ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’, দূষণে বিশ্বের শীর্ষ ১০-এ।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা আজকের বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় দশম স্থানে রয়েছে। আন্তর্জাতিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণ সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI)-এর আজ (রবিবার) সকালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ঢাকার AQI স্কোর ছিল ১১৬, যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত।
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর হিসেবে তালিকার শীর্ষে রয়েছে বাহরাইনের মানামা, যার AQI স্কোর ২৪৩। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কাতারের দোহা (২৩০) এবং তৃতীয় অবস্থানে পাকিস্তানের লাহোর (২০৯)।
বায়ুমানের মাত্রা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি:
- ১০১-২০০ স্কোর: সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর
- ২০১-৩০০ স্কোর: খুব অস্বাস্থ্যকর
- ৩০১-৪০০ স্কোর: বিপজ্জনক, যা সাধারণ জনগণের জন্যও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে
ঢাকার বায়ুদূষণ পরিমাপ করা হয় পাঁচটি প্রধান উপাদানের ভিত্তিতে:
পিএম-১০, পিএম-২.৫, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (NO₂), কার্বন মনোক্সাইড (CO), সালফার ডাই-অক্সাইড (SO₂), ওজোন (O₃)।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মাত্রার দূষণে শিশু, বয়স্ক, হাঁপানি বা হৃদরোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট, হৃদপিণ্ডে চাপ ও অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। নগরবাসীকে প্রয়োজনবোধে মাস্ক পরিধান, দীর্ঘ সময় খোলা আকাশের নিচে না থাকা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
পূর্বপ্রেক্ষাপট : কেন এত দূষিত ঢাকার বাতাস?
ঢাকার বায়ুদূষণ নতুন কোনো সমস্যা নয়। প্রতিনিয়ত নির্মাণকাজ, যানবাহনের ধোঁয়া, ইটভাটা ও শিল্প কারখানা থেকে নির্গত ধূলিকণা ও বিষাক্ত গ্যাসগুলোই মূলত রাজধানীর বাতাসকে প্রতিনিয়ত দূষিত করে তুলছে। বিশেষ করে শীতকাল ও গ্রীষ্মের শুরুতে ধূলিকণার মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায়, যার ফলে দীর্ঘ সময় ধরে ঢাকার বাতাসের মান থাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে।
বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকাকে বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহর হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে। ২০২৪ সালেই ঢাকায় একাধিকবার বায়ুর মান সূচক ২০০ ছাড়িয়ে গেছে, যা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগর পরিকল্পনায় ঘাটতি, ট্রাফিক জ্যাম, অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর নীতির অভাবই এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র মতে, বায়ুদূষণ বাংলাদেশের স্বাস্থ্যঝুঁকির শীর্ষ কারণগুলোর একটি।
সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবায়নের ঘাটতি এবং সমন্বয়ের অভাবে দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি। পরিবেশবিদরা মনে করছেন, এখনই যদি কঠোর ও সমন্বিত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে বায়ুজনিত রোগ ও জীবনমানের অবনতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।