১ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কাশ্মীর হামলার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখাতে জাতিসংঘের আহ্বান

সমাজকাল ডেস্ক :

কাশ্মীরের পাহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা চরমে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে দুই প্রতিবেশী দেশের প্রতি ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে এক ব্রিফিংয়ে এ আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্তেফান দুজারিক।

পাহেলগাঁও, যা কাশ্মীরের একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র, সেখানে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ২৬ জন পর্যটক। আহত হয়েছেন অন্তত ১৭ জন। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের নাগরিক, একজন ছিলেন নেপালের।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়, “আমরা ভারত ও পাকিস্তান উভয় সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি যাতে তারা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে না নিয়ে যায় এবং সর্বোচ্চ সংযম বজায় রাখে।”

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুজারিক বলেন, মহাসচিব এখনও ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃত্বের সঙ্গে সরাসরি কোনো যোগাযোগ করেননি। তিনি আরও বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি যে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার যেকোনো বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে এবং পারস্পরিক সংলাপের মাধ্যমে সমাধান হওয়া উচিত।”

বিশেষভাবে ভারতের পক্ষ থেকে সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে দুজারিক জানান, এমন সিদ্ধান্তে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে—তাই তারা এই ধরনের পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন।

তবে জাতিসংঘের এই আহ্বানের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ রেখায় (LoC) ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। আজাদ কাশ্মীরের এক সরকারি কর্মকর্তা সৈয়দ আশফাক গিলানি জানিয়েছেন, গোলাগুলির সময় বেসামরিক এলাকায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

এদিকে, পাকিস্তান পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ ঘোষণা করেছে এবং আকাশসীমা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একইসঙ্গে ওয়াঘা সীমান্তও বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (NSC) এক জরুরি বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পাক প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের (PMO) দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, “ভারতের একতরফা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং আন্তর্জাতিক আইনবহির্ভূত আচরণ পাকিস্তান প্রত্যাখ্যান করছে। ভারতের এমন পদক্ষেপ কেবল অস্থিরতা বাড়াবে এবং শান্তিপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে।”

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, ভারতের সঙ্গে সমস্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, বিশেষ করে ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তিও, স্থগিত রাখা হতে পারে। বিবৃতিতে বলা হয়, “যতদিন না ভারত পাকিস্তানে সন্ত্রাসে উসকানি বন্ধ করে এবং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের প্রস্তাব মান্য করে, ততদিন এসব চুক্তি কার্যকর থাকবে না।”

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, “আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। এটি দ্রুত পরিবর্তনশীল একটি অবস্থা। আমরা কাশ্মীর বা জম্মু নিয়ে বর্তমানে কোনো অবস্থান নিচ্ছি না।”

ভারত ও পাকিস্তানের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলের এখন নজর দুই দেশের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
X
LinkedIn