২ জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Hajj

আগামী ২৫ বছরের হজ হবে ঠাণ্ডা মৌসুমে

আগামী ২৫ বছরের হজ হবে  ঠাণ্ডা মৌসুমে । বিশেষ করে গ্রীষ্মের দাবদাহে যখন সূর্যের তাপ ৪৫ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই, তখন হাজিদের কষ্টের সীমা থাকে না। তবে সামনের মৌসুম থেকে এই কষ্টের সমাপ্তি হতে যাচ্ছে।

 

মাইসারা জান্নাত

প্রতি বছর বিশ্বের লাখ লাখ মুসলমান পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন হজ পালন করতে। ইবাদতের এই মধুর সফর অনেক সময় রূপ নেয় কঠিন পরীক্ষায়, যখন প্রকৃতির নির্মম আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করে আদায় করতে হয় ফরজ হজ। বিশেষ করে গ্রীষ্মের দাবদাহে যখন সূর্যের তাপ ৪৫ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই, তখন হাজিদের কষ্টের সীমা থাকে না। তবে সামনের মৌসুম থেকে এই কষ্টের সমাপ্তি হতে যাচ্ছে। আগামী ২৫ বছর হজ অনুষ্ঠিত হবে ঠাণ্ডা মৌসুমে।

সৌদি আরবের উত্তপ্ত মরু অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে হজ পালন করা খুবই কঠিন। অতীতে বহু হাজি সূর্যতাপে অসুস্থ হয়েছেন, প্রাণ হারিয়েছেন শত শত মানুষ। এই দৃশ্যপট এবার বদলে যেতে চলেছে। সৌদি আরবের আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ নতুন হজ পঞ্জিকা প্রকাশ করে জানিয়েছে, হজের সময়কাল এখন ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা মৌসুমে প্রবেশ করবে। ফলে হাজিরা অপেক্ষাকৃত স্বস্তিকর আবহাওয়ায় পবিত্র হজ আদায় করতে পারবেন। এই পরিবর্তন হাজিদের জন্য যেমন স্বস্তির, তেমনি হজ ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্যও অনেক সুবিধাজনক বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই স্বাভাবিক পরিবর্তনের ধারায় আগামী বছরগুলোতে হজ পড়বে একে একে বসন্ত, শীত ও শরৎকালের মতো তুলনামূলকভাবে শীতল ও সহনীয় ঋতুতে। ফলে আগামী ২৫ বছর গ্রীষ্মের দাবদাহে আর হজ আদায় করতে হবে না কোনো হাজিকে।

এটি নিঃসন্দেহে বিশ্ব মুসলিমের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক সংবাদ। কারণ বয়স্ক হাজিদের জন্য গরমে হজ পালন করা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর জন্যও গ্রীষ্মকালীন হজ নানা চ্যালেঞ্জ বয়ে আনে। ঠাণ্ডা ঋতুতে হজ পালনের মাধ্যমে যেমন হাজিরা পাবেন আরামদায়ক পরিবেশে ইবাদতের সুযোগ, তেমনই সৌদি প্রশাসনও সফলভাবে স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে।

এ বছরের হজ কার্যক্রম শেষ হয়েছে। হজযাত্রীরা নিজ নিজ দেশে ফিরে আসছেন। এ বছর হজের সময় মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় তাপামাত্রা ছিল ৪২ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। এবারের হজে তীব্র গরমের ভয় ছিল, সে অনুযায়ী সৌদি আরব নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করায় নিরাপদেই শেষ হয়েছে হজ।

এ বছর হজপালনের সময় তীব্র গরমের হাত থেকে রক্ষা পেতে ছায়াযুক্ত এলাকার পরিমাণ বাড়ানো হয় এবং হজযাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক কুলিং সিস্টেম, পানি সরবরাহ ও বিশ্রামের জায়গা রাখা হয়। একই সঙ্গে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আগেভাগে প্রশিক্ষণ ও দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছিল, যা বাস্তবে ভালো ফল দিয়েছে।

২০২৪ সালের হজে গরমজনিত কারণে মারা গিয়েছিলেন অন্তত ১ হাজার ৩ শতাধিক এবং অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন আরও কয়েক হাজার। এসব কারণেই এবারের হজে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও গরম মোকাবিলায় বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

সৌদি আরবের ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিটিওরলজির মুখপাত্র হুসেইন আল কাহতানি জানিয়েছেন, চলতি বছরই শেষবারের মতো গ্রীষ্মকালে হজ অনুষ্ঠিত হলো। এরপর থেকে হজ ধীরে ধীরে বসন্ত, শীত ও শরতের দিকে সরে যাবে। এই পরিবর্তনের মূল কারণ হলো, চন্দ্রপঞ্জির সময় গণনা পদ্ধতি।

হিজরি বর্ষ চাঁদের ওপর নির্ভর করে, আর তা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের চেয়ে প্রতি বছর প্রায় ১১ দিন করে এগিয়ে আসে। এই হিসেবেই হজের সময় ধীরে ধীরে বদলে যায়। ফলে এই পঞ্জিকা অনুযায়ী, আগামী ২৫ বছর গরমকালে আর হজ পড়বে না।

গালফ নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হজের এই সময়কালকে তিনটি ধাপে ভাগ করা হয়েছে, ২০২৬ থেকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত হজ পড়বে বসন্তকালে অর্থাৎ মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে। ২০৩৪ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত হজ হবে শীতকালে, অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এবং ডিসেম্বরের শেষ ভাগে। এরপর ২০৪২ থেকে ২০৪৯ সাল পর্যন্ত হজ পালন করা হবে শরৎকালে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে। ২০৫০ সাল থেকে হজ আবার গ্রীষ্মকালে ফিরে আসবে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
X
LinkedIn