১ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আইসিডিডিআ,বির গবেষণায় তথ্য, শিশুর বিকাশে শৈশবে বাবার ভূমিকা অপরিহার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রাথমিক শৈশবের বিকাশই শিশু বিকাশের উপযুক্ত সময় বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটি শৈশব থেকেই শিশুর স্বাস্থ্য, পুষ্টি, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভালোবাসা, খেলা ও বেড়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ অত্যন্ত জরুরি বলে জানায়।

সরকারের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে বাংলাদেশের শিশুদের সম্পূর্ণ বিকাশের সম্ভাবনা বাড়ানোর লক্ষ্যে পরিচালিত এক গবেষণায় এই তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।

আজ বৃহস্পতিবার (৪জুলাই) রাজধানীর আইসিডিডিআর,বির সাসাকাওয়া অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ কর্মসূচি’ শীর্ষক এক সেমিনারে এই বক্তব্য তুলে ধরা হয়। আইসিডিডিআর,বি’র মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের (এমসিএইচডি) এমেরিটাস বিজ্ঞানী ড. জেনা দেরাখশানি হামাদানি এই গবেষণা উপস্থাপন করেন।

সেমিনারে বলা হয়, বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দরিদ্রতা ও পুষ্টিহীনতার কারণে এবং অপর্যাপ্ত অভিভাবকত্ব দক্ষতার অভাবে পাঁচ বছরের নিচের প্রায় ২৫ কোটি শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এসব শিশুর বিকাশে প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি প্রাথমিক শৈশব উদ্দীপনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রচার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আইসিডিডিআর,বির গবেষণায় বলা হয়, শিশু বিকাশের ভিত্তি গঠিত হয় যখন মা গর্ভবতী হন এবং এটি শিশুর তিন বছর বয়স পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এই সময়টা শিশুর প্রাথমিক শৈশব বিকাশের জন্য ‘সুবর্ণ সুযোগ’। এ সময় শিশুর শেখার অভিজ্ঞতা তার বুদ্ধিমত্তা, আচরণ ও ব্যক্তিত্বের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।

গবেষণায় আরও বলা হয়, শিশুর বিকাশে পরিবারের সবাইকে, বিশেষ করে বাবাদের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। এ জন্য শিশুর প্রয়োজনগুলোর প্রতি মনোযোগী হতে হবে, ভাষা দক্ষতা বাড়ানোর জন্য তাদের সাথে কথা বলতে হবে ও খেলার মাধ্যমে শেখার জন্য বয়স উপযোগি খেলনা দিতে হবে। এতে শিশুর বৃদ্ধি এবং সুস্থতা বাড়ে।

এসময় এই বিজ্ঞানী জানান, বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে প্রাথমিক শৈশব বিকাশকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। বিশেষ করে ধারা ৪.২ এর লক্ষ্য হচ্ছে সব মেয়ে এবং ছেলে শিশুদের মানসম্পন্ন প্রাথমিক শৈশব বিকাশ ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ দেওয়া, যাতে শিশু প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে পারে। এ জন্য সরকার আইসিডিডিআর,বি’র সাথে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক শৈশব বিকাশ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

আইসিডিডিআর,বি জানায়, বর্তমানে এই কর্মসূচি দেশের চার জেলা নরসিংদি, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষীপুরের ২১টি উপজেলার ৬১৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকে বাস্তবায়ন হচ্ছে। ৪৮৫ জন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রাথমিক শৈশব বিকাশ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ও তারা আরও ১ হাজার ৮২১ জন সম্মুখসারির স্বাস্থ্য কর্মীদের এই প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

এর মধ্যে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি), স্বাস্থ্য সহকারী (এইচএ) ও পরিবার কল্যাণ সহকারী (এফডবিউএ) রয়েছেন। এর ফলে এখন পর্যন্ত ৬-৩৬ মাস বয়সী শিশুদের ১৪ হাজারের বেশি মা বা যত্নদাতারা প্রশিক্ষিত হয়েছেন।

আইসিডিডিআর,বি বলছে, প্রশিক্ষিত এসব মা প্রতিভাবান শিশুদের বিকাশ ও একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে অগ্রনী ভূমিকা রাখতে পারে । বয়স উপযোগী খেলাধুলার মাধ্যমে শিশু বিকাশ ত্বরান্বিত হয়।

সেমিনারে প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, বিশেষ অতিথি স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, এমপি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম উপস্থিত ছিলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন শিশু বিকাশের জন্য আইসিডিডিআর,বি-র অংশীদার হিসাবে এক সাথে কাজ চালিয়ে যাবেন বলে জানান।

তিনি বলেন, শিশুরাই এদেশের ভবিষ্যৎ। শৈশব থেকেই যদি আমরা তাদের মানসিক বিকাশ ঘটাতে পারি, নিঃসন্দেহে তারা ভবিষ্যতে দেশের কাণ্ডারি হবে।

স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা বলেন, শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে আইসিডিডিআর,বি-র কাজ প্রশংসনীয়। শিশুরা যে পরিবেশে বেড়ে উঠছে তা বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে তাদের বাড়ি, আশেপাশের জায়গা, স্কুল এবং আরও অনেক কিছু। তাদের বিকাশের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করাও অপরিহার্য।”

সেমিনারে আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ ও এমসিএইচডি বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. শামস এল আরেফিন বক্তব্য রাখেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
X
LinkedIn