১ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অর্থনৈতিক সংস্কার প্রস্তাবের প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ আর্জেন্টিনায়

সমাজকাল ডেস্ক:

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মাইলি প্রস্তাবিত এক অর্থনৈতিক সংস্কার আইনকে ঘিরে প্র্রতিবাদ- বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্স। সংস্কার প্রস্তাবটি নিয়ে গতকাল বুধবার দেশটির পার্লামেন্ট কংগ্রেসে বিতর্ক শুরু হলে এর বাইরে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারী ও দাঙ্গা পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ।

দাঙ্গা পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছে। এর মধ্যে দেশটির বিরোধী দলীয় পাঁচ আইনপ্রণেতাও রয়েছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি, এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

বলা হয়েছে, বুধবার (১২ জুন) প্রেসিডেন্ট হাভিয়ার মাইলির এই সংস্কার প্রস্তাবের প্রতিবাদে দেশটির সাধারণ জনগণ ও বিরোধী দলীয় আইনপ্রণেতারা রাজপথে নেমে আসে। আইন প্রণেতাদের উপস্থিতিতে কংগ্রেসে এই প্রস্তাবের ওপর বিতর্ক চলাকালে প্রতিবাদ জানায় সাধারণ জনগণ ও বিরোধী দলীয় কিছু আইনপ্রণেতা। এ সময় বিক্ষোভকারীরা কংগ্রেস ভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

তারা পুলিশের দিকে পেট্রল বোমা ও পাথর ছুড়ে মারে। এছাড়াও কংগ্রেস ভবনের বাইরে দুটি গাড়িতে আগুনও দেয়। জবাবে দাঙ্গা পুলিশ তাদের দিকে মরিচের গুড়া ছুড়ে মারে। এতে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী আহত হন। এদিকে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে তাদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ও জলমাকান ছোঁড়ে পুলিশ।

দেশের অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে আর্জেন্টিনার ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট মাইলি বাজেটে একগুচ্ছ সংস্কারের প্রস্তাব এনেছেন। এর মধ্যে গুরুত্ব পেয়েছে অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা, অবসরকালীন ভাতার সুযোগ সীমিত করা এবং শ্রম অধিকার খর্ব করাসহ আরও কিছু সংস্কার।

কংগ্রেসের সিনেটে উত্থাপিত এই বিল নিয়ে বুধবার শেষ বেলা পর্যন্ত সিনেটরদের মধ্যে তুমুল বিতর্ক চলে। এনিয়ে উচ্চকক্ষে এদিন ভোটাভুটিও হওয়ার কথা।

কিন্তু এই সংস্কার প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে দেশটির বামপন্থী রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংগঠন এবং সামাজিক সংগঠনগুলো।

এদিকে বুধবারের প্রতিবাদ- বিক্ষোভে সৃষ্ট সহিংস পরিস্থিতিকে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে বর্ণনা করেছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। ফরাসী বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেশটির আইনপ্রণেতা সিসিলিয়া মোরেউ বলেছেন, পর্যবেক্ষক ও বিরোধী দলীয় আইনপ্রণেতারা জানিয়েছেন যে, এদিনের বিক্ষোভে আহত হয়েছেন কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী ও কয়েকজন আইনপ্রণেতা। প্রতিবাদ সমাবেশের ভিড়ের ভিতরে আহত হওয়া কমপক্ষে পাঁচজন বিরোধী দলীয় নেতাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিনের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার ৫৫ বছর বয়সী আইনজীবী ফ্যাবিও নূনেজ। তিনি এএফপিকে বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাসই করতে পারি না যে, আর্জেন্টিনায় আমরা এমন একটি আইন নিয়ে এখন আলোচনা করছি, যা আমাদের আরও একশ’ বছর পিছিয়ে দেবে।’

অপরদিকে প্রেসিডেন্ট মাইলির কার্যালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বুধবারের এ বিক্ষোভকে ‘অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে এবং এটি দমনে জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে ধন্যবাদও জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট মাইলি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০২৩ সালে আর্জন্টিনার ক্ষমতায় আসেন। আর্জন্টাইন জাতিকে বিভক্ত করা সংস্কার প্রস্তাবটিতে বেশ কিছু পরিবর্তন এনে গত এপ্রিলে পার্লামেন্টের নিন্মকক্ষে পাস করা হয়। এবার সিনেটে এটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হলে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই চড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আবার নিন্মকক্ষে নেওয়া হবে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
X
LinkedIn