১৫ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ওয়ারেন বাফেট : সাদাসিধে স্বভাবেই গড়া এক ১৬৮ বিলিয়ন ডলারের সাম্রাজ্য

সমাজকাল ডেস্ক :

🔹 ওমাহার ওরাকল
ওয়ারেন এডওয়ার্ড বাফেট—নামটি শুধু একজন বিনিয়োগকারীর নয়, এক জীবন্ত প্রতিষ্ঠান, আর্থিক স্থিরতা ও সুদূরপ্রসারী দূরদর্শিতার প্রতীক। বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি হয়েও তিনি যেন সম্পদের প্রতি নির্লিপ্ত, স্বভাবের দিক থেকে সাদাসিধে। ২০২৫ সালের মে মাসে তার সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬৮.২ বিলিয়ন ডলার, যা তাঁকে বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ ধনীর কাতারে রেখেছে।

🔸 যেভাবে গড়েছেন সাম্রাজ্য
বাফেটের বিনিয়োগ দর্শনের মূল কথা—“buy quality, hold long”। তিনি ঝুঁকিপূর্ণ বা তাৎক্ষণিক মুনাফার প্রলোভনে কখনো পা রাখেননি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান Berkshire Hathaway একসময় ছিল একটি টেক্সটাইল কোম্পানি। ১৯৬৫ সালে তিনি তা অধিগ্রহণ করেন এবং ধীরে ধীরে একে রূপ দেন এক বহুবিধ ব্যবসায়িক কনগ্লোমারেটে।

আজ Berkshire-এর পোর্টফোলিওতে রয়েছে: Geico (বীমা), Duracell (ব্যাটারি), See’s Candies (চকোলেট)
BNSF Railway, Dairy Queen, NetJets এবং শেয়ার হোল্ডিংস: Apple, Coca-Cola, American Express, Chevron, Bank of America, Citigroup, Kroger

বাফেটের মতে, “যেসব ব্যবসা আমি বুঝি এবং যাদের ভবিষ্যৎ দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল—তাদের পেছনেই আমি বিনিয়োগ করি।”

🔸 সাদামাটা জীবনধারা
বিশ্বের ধনকুবেরদের ছক ভাঙা একটি জীবন কাটিয়েছেন বাফেট। তিনি এখনো থাকেন ১৯৫৮ সালে কেনা $৩১,৫০০ মূল্যের ছোট একতলা বাড়িতে

প্রতিদিন খান ৫ ক্যান কোকা-কোলা, সপ্তাহে তিন দিন খান ম্যাকডোনাল্ডস। প্রিয় খাবার: আলুর চিপস, আইসক্রিম, চিকেন ম্যাকনাগেটস । শখের তালিকায় আছে: ব্রিজ খেলা, ইউকুলেলে বাজানো

এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি সাধারণ পোশাকে, সাধারণ খাবারে খুশি। বিলাসিতা আমার শান্তি কেড়ে নেয়।”

🔸 একজন মানবিক ধনকুবের
২০০৬ সালে বাফেট ঘোষণা দেন, তিনি নিজের সম্পদের ৯৯% দান করবেন সমাজকল্যাণমূলক কাজে। এই প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটসের সঙ্গে মিলে গড়ে তোলেন The Giving Pledge—যেখানে বিশ্বের শতাধিক ধনী তাঁদের সম্পদের অন্তত অর্ধেক দান করার অঙ্গীকার করেছেন।

আজও, ছোট বিনিয়োগকারীরা তাঁর এই মানবিক মূল্যবোধের জন্য ভিড় করেন ওমাহায় Berkshire Hathaway-এর বার্ষিক সভায়। সেই সভাকে কেউ কেউ বলেন, “Woodstock for Capitalists”।

🔸 বিনিয়োগ-দর্শনের পেছনের গল্প
জন্ম: ৩০ আগস্ট ১৯৩০, ওমাহা, নেব্রাস্কা । ছোটবেলা থেকেই ব্যবসার ঝোঁক; মাত্র ৭ বছর বয়সে পড়েন “One Thousand Ways to Make $1,000”
কলেজ: ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া → ইউনিভার্সিটি অব নেব্রাস্কা → মাস্টার্স: কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি (ইকোনমিক্স)

১৯৫৬ সালে তৈরি করেন Buffett Partnership

১৯৬৫ সালে অধিগ্রহণ করেন Berkshire Hathaway

তার শিক্ষক ছিলেন বিনিয়োগ তত্ত্বের কিংবদন্তি বেঞ্জামিন গ্রাহাম—যার “value investing” দর্শন বাফেটের জীবনের ভিত গড়ে দেয়।

🔸 রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান
বাফেট যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টি-ঘেঁষা, এবং বারবার বলেছেন—ধনীদের আরও বেশি কর দেওয়া উচিত। তিনি বিটকয়েনকে “অর্থহীন” বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্যনীতি নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেছেন।

🔸 পরিবার ও উত্তরাধিকার
বাফেটের ব্যক্তিজীবনও বিনয়ের উদাহরণ। প্রথম স্ত্রী সুসান থম্পসন বাফেট, ২০০৪ সালে প্রয়াত

তিন সন্তান

২০০৬ সালে বিয়ে করেন দীর্ঘদিনের সঙ্গী Astrid Menks-কে

Berkshire-এর দীর্ঘদিনের সঙ্গী ছিলেন Charlie Munger, যিনি বাফেটের চেয়ে ৬ বছর বড়।
২০২১ সালে ঘোষণা আসে, বাফেটের উত্তরসূরি হবেন Greg Abel। অবশেষে ২০২৫ সালের শেষে CEO পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন বাফেট।

ওয়ারেন বাফেট শুধু ধনকুবের নন, বরং আর্থিক জগতের নীতিনিষ্ঠ পথপ্রদর্শক। তার জীবন প্রমাণ করে—সফলতা মানে বিলাসিতা নয়, বরং সঠিক সিদ্ধান্ত, ধৈর্য, এবং মানবিকতা।