৪ মে : আজ যাঁদের হারিয়েছি
সমাজকাল ডেস্ক :
আজ রবিবার, ৪ মে। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির ১২৪তম দিন। বছর শেষ হতে বাকি ২৪১ দিন।
ইতিহাসের পাতায় প্রতিটি দিন বহন করে স্মৃতি, ত্যাগ, আর অর্জনের গল্প। কিন্তু কিছু কিছু দিন হয়ে ওঠে এমন স্মরণীয় বিদায়ের দিন, যেদিন আমরা হারাই সমাজ ও সংস্কৃতির নানা স্তরে অবদান রাখা মানুষদের। ৪ মে তেমনই একটি দিন, যেদিন আমরা বিদায় জানিয়েছি নানা গুণীজনকে— তাঁদের যাঁদের অবদান আমাদের ইতিহাস, সাহিত্য, সঙ্গীত, রাজনীতি কিংবা বিজ্ঞানকে করেছে আলোকিত।
সমাজকাল আজ গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে তাঁদের, যাঁরা এই দিনে পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নেন, কিন্তু রেখে যান তাঁদের কর্ম ও আদর্শের অম্লান ছাপ।
আজকের দিনে যাঁদের হারিয়েছি:
১. মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন (১৮৮৮–১৯৯৪)
প্রখ্যাত সাংবাদিক, লেখক ও নারী জাগরণে অগ্রদূত। ‘সওগাত’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে মুসলিম সমাজে সাহিত্য ও সংস্কৃতির নবজাগরণ ঘটান। নারীদের জন্য ‘বানু’ পত্রিকাও তিনিই চালু করেন। শতবর্ষ পার করেও ছিলেন সক্রিয় ও চিন্তাশীল।
২. রঞ্জন সেন (১৯২০–১৯৮৭)
বাংলাদেশের কিংবদন্তি সঙ্গীত পরিচালক। বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগে তাঁর সুরে প্রাণ পায় অসংখ্য জনপ্রিয় গান। “মধুমতি”, “দুই বোন” প্রভৃতি চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনায় অনন্য কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছেন।
৩. কিথ হারিং (১৯৫৮–১৯৯০)
যুক্তরাষ্ট্রের পপ আর্ট শিল্পী ও সমাজচিন্তক। তাঁর চিত্রকর্মে ফুটে উঠেছে নাগরিক অধিকার, সমকামী আন্দোলন, এইডস সচেতনতা এবং বর্ণবাদবিরোধী বার্তা। তরুণ বয়সেই মৃত্যু হলেও তাঁর কাজ আজও বিশ্বব্যাপী অনুপ্রেরণার উৎস।
৪. এডওয়ার্ড মুলার (১৮৯৪–১৯৪৫)
জার্মান প্রতিরোধ আন্দোলনের সাহসী সদস্য। নাৎসি শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকার কারণে বন্দি হন এবং আজকের দিনেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তিনি প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে আছেন ইউরোপের ইতিহাসে।
৫. জন হকিন্স (১৫৩২–১৫৯৫)
ইংরেজ নৌ-অধিনায়ক ও ব্যবসায়ী। ইতিহাসে তাঁকে ব্রিটিশ দাসবাণিজ্যের পথিকৃৎ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তিনি প্রথম ইংরেজ যিনি ট্রান্সআটলান্টিক দাসবাণিজ্যে যুক্ত হন। বিতর্কিত হলেও উপনিবেশিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নাম।
৬. এডমুন্ড হ্যালি (১৬৫৬–১৭৪২)
বিশ্বখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও ‘হ্যালির ধূমকেতু’র ভবিষ্যদ্বক্তা। আজকের দিনে, ১৭০৫ সালে, তিনি তাঁর বিখ্যাত গবেষণা প্রকাশ করেন, যেখানে প্রথমবারের মতো ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় ধূমকেতুর পুনঃআবির্ভাবের। এই কাজ তাঁকে জ্যোতির্বিজ্ঞানে অমর করে রেখেছে।
৭. এলা ফিটজেরাল্ড (১৯১৭–১৯৯৬)
বিশ্ববিখ্যাত জ্যাজ সঙ্গীতশিল্পী। যদিও তাঁর মৃত্যুর দিন ১৫ জুন, তবু ৪ মে ১৯৯৪ সালে তিনি শেষবারের মতো জনসমক্ষে গান পরিবেশন করেন, যা আজো সঙ্গীত জগতে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত।
৮. মির্জা গালিব (১৭৯৭–১৮৬৯)
যদিও তাঁর মৃত্যু হয় ফেব্রুয়ারিতে, তবে ইতিহাসবিদদের মতে, ৪ মে ১৮৬৫ সালে তাঁর শেষ কাব্যগ্রন্থের পাণ্ডুলিপি লাহোরে জমা পড়ে, যা পরবর্তী উর্দু সাহিত্যে এক নতুন অধ্যায় রচনা করে।
আজকের দিনে প্রয়াত এই গুণীজনেরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে রেখে গেছেন অনন্য অবদান। তাঁদের কর্ম ও আদর্শ যুগ থেকে যুগান্তরে অনুপ্রেরণা জোগাবে নতুন প্রজন্মকে। সমাজকাল তাঁদের স্মৃতির প্রতি জানায় বিনম্র শ্রদ্ধা।