১৫ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
HPV

৩৫-৩৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এইচপিভি সংক্রমণের হার বেশি : গবেষণায় উদ্বেগজনক চিত্র

৩৫-৩৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এইচপিভি সংক্রমণের হার বেশি : গবেষণায় উদ্বেগজনক চিত্র। বাংলাদেশে জরায়ুমুখ ক্যানসার স্ক্রিনিং গবেষণায় দেখা গেছে, ৩৫-৩৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এইচপিভি সংক্রমণের হার বেশি। অঞ্চলভেদে রয়েছে বড় পার্থক্য। স্ক্রিনিং কার্যক্রম আরও জোরদার করার সুপারিশ।

সমাজকাল প্রতিবেদক:

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিচালিত সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে, ৩৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচআর-এইচপিভি) সংক্রমণের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। জরায়ুমুখ ক্যানসারের অন্যতম প্রধান কারণ এই ভাইরাসটি। যদিও জাতীয় পর্যায়ে সংক্রমণের হার এখনও তুলনামূলকভাবে কম, তবে অঞ্চলভেদে তা উদ্বেগজনক পার্থক্য দেখাচ্ছে।

সংক্রমণের পরিসংখ্যান ও অঞ্চলভেদে চিত্র

বাংলাদেশের গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে পরিচালিত ৩ হাজার ৮৫৬ জন নারীর ওপর এক গবেষণায় দেখা যায়, এইচআর-এইচপিভি সংক্রমণের গড় হার ৩.৬ শতাংশ (১৩৮ জন)। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ছিল সিলেট অঞ্চলে—৭.১ শতাংশ, যেখানে রাজশাহীতে ছিল মাত্র ১.৭ শতাংশ। শহরের তুলনায় গ্রামীণ নারীদের মাঝে সংক্রমণের হার বেশি পাওয়া গেছে।

সিলেট, বরিশাল ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় জেলাগুলোর ৯০০ জন নারীর ওপর পরিচালিত আরও একটি জরিপে সংক্রমণের গড় হার ছিল ২.৫৬ শতাংশ। সর্বাধিক সংক্রমণ পাওয়া গেছে ঝালকাঠিতে। সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হওয়া জিনোটাইপ ছিল এইচপিভি-১৬, যা প্রায় ৩৮ শতাংশ ক্ষেত্রে উপস্থিত ছিল।

স্ক্রিনিং পদ্ধতিতে পরিবর্তন ও কার্যকারিতা

মুগদা মা ও শিশু হাসপাতালের এক গবেষণায় ৪ হাজার ৭৯২ জন নারীকে দুটি স্ক্রিনিং পদ্ধতিতে ভাগ করে দেখা গেছে, ‘ভায়া + এইচপিভি’ সম্মিলিত পদ্ধতিতে শনাক্তকরণ ও ফলোআপের হার বেশি। এতে ৫.৯ শতাংশ পজিটিভ শনাক্ত হয়, যেখানে কেবল এইচপিভি স্ক্রিনিংয়ে এ হার ছিল ৩.৭ শতাংশ। ফলে এই মিলিত পদ্ধতির কার্যকারিতা বেশি বলেই উঠে এসেছে।

ই-স্বাস্থ্য প্ল্যাটফর্ম ও চ্যালেঞ্জ

জাতীয় পর্যায়ে রাজশাহী বিভাগে ইলেকট্রনিক স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থার (ই-এইচআইএস) মাধ্যমে স্ক্রিনিং কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ২১৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগ ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা এখনও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে।

নীতিনির্ধারণে সুপারিশ

  • গবেষণাপত্র উপস্থাপন ও আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ তুলে ধরেন:
  • উচ্চ সংক্রমণপ্রবণ অঞ্চলে স্ক্রিনিং কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করা
  • ৩৫-৪৪ বছর বয়সীদের অগ্রাধিকার
  • ই-স্বাস্থ্য প্ল্যাটফর্মকে জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সমন্বয়
  • ভায়া + এইচপিভি সম্মিলিত পদ্ধতির মাধ্যমে ট্রাইএজ ও ফলোআপ
  • হিস্টোপ্যাথলজি রিপোর্টিংকে ই-এইচআইএসের সঙ্গে সংযুক্ত করা

বিশেষ স্বীকৃতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
অনুষ্ঠানে সেরা পারফর্মিং কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্ক্রিনিং কেন্দ্রগুলোকে পুরস্কৃত করা হয়। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ-ব্লকে একটি বিশেষ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার পরিকল্পনাও জানানো হয়, যা জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার রোগীদের জন্য বিশেষায়িত সেবা প্রদান করবে।

বিশেষজ্ঞ মতামত
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী বলেন, “স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ক্যানসারের প্রাক-অবস্থা চিহ্নিত করে বহু নারীকে বাঁচানো সম্ভব। এই কর্মসূচির কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।”

বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, “অপ্রতুল বাজেটেও বাংলাদেশ স্বাস্থ্যখাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। স্ক্রিনিং কর্মসূচিকে একটি পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউটে রূপান্তরের লক্ষ্য আমাদের সামনে রয়েছে।”

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
X
LinkedIn