সাবেক তিন সিইসি ও ১৯ কমিশনারের বিরুদ্ধে ইসিতে বিএনপির অভিযোগ, এক যুগ ধরে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের দায় সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশনগুলোর ওপর চাপিয়ে দিয়ে সাবেক তিনজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনের মোট ১৯ সদস্যের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দিয়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনে।
নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি এক যুগ ধরে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের দায় সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশনগুলোর ওপর চাপিয়ে দিয়ে সাবেক তিনজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনের মোট ১৯ সদস্যের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দিয়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনে। একই সঙ্গে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়েরেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি।
রোববার (২২ জুন) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত একটি লিখিত আবেদন বর্তমান সিইসি এম এম নাসির উদ্দিনের কাছে জমা দেওয়া হয়। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে অভিযোগপত্রটি হস্তান্তর করে।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা তিনজন সিইসি—কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নূরুল হুদা এবং কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে।
সালাহ উদ্দিন খান জানান, “বিতর্কিত তিনটি জাতীয় নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্ব পালনকারীরা গণতন্ত্র ও সংবিধানের সঙ্গে বেঈমানি করেছেন। তারা জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছেন, তাই তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে মামলা করা হবে।”
অভিযুক্তদের তালিকা ও ইতিহাস
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। বিএনপি ভোট বর্জন করে এটিকে “বিনা ভোটের সংসদ” বলে আখ্যা দেয়।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ নির্বাচনে “ভোট আগের রাতে” হয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলে বিএনপি একে “নীশিরাতের নির্বাচন” বলে অভিহিত করে।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী দলসমূহ বর্জন করায় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এ নির্বাচনকে বিএনপি “আমি আর ডামি” নির্বাচন বলে উল্লেখ করে।
বর্তমান কমিশনের প্রতিক্রিয়া
বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন খান জানান, বর্তমান সিইসি এম এম নাসির উদ্দিন তাদেরকে বলেছেন, “আমরা কারো পক্ষপাতী নই, আইনি পর্যালোচনা করে যা করা সম্ভব তাই করব।”
অন্তর্বর্তী সরকার ও তদন্ত কমিটি
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এই তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট ইসি সদস্য ও কর্মকর্তাদের ভূমিকা তদন্তে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। সর্বশেষ ১৬ জুন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সালাহ উদ্দিন খান আরও বলেন, “আমরা শেরেবাংলা নগর থানায় মামলার আবেদন দিচ্ছি। এই মামলায় শেখ হাসিনাকেও রাখা হয়েছে। তদন্তে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করছি।”
সংক্ষেপে:
বিএনপি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের দায়ে তিন সাবেক সিইসি ও অন্যান্য কমিশনারদের বিরুদ্ধে ইসিতে অভিযোগ দিয়েছে
শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়েরের পদক্ষেপ
অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে
সিইসি বলছেন, আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।