১৫ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংসদে প্রধানমন্ত্রী: পলাতক আসামীদের ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গ্রেনেড হামলা, মানিলন্ডারিংসহ দুর্নীতির একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী তারেক রহমানকে (তারেক জিয়া) প্রাপ্য সাজার মুখোমুখী করতে সকল প্রকার প্রচেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি জানান, পলাতক আসামীদের ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। খুনি জিয়া রক্তাক্ত হাতে খাবার খেতেন এবং খেতে খেতেই ফাঁসির আদেশে স্বাক্ষর করতেন।

আজ বুধবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে সরকারি দলের সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন উত্থাপিত প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী জানান, সাজাপ্রাপ্ত আসামী তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছে। যুক্তরাজ্য থেকে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কিছু আইনগত জটিলতা আছে। ওই সকল জটিলতা আইনী প্রক্রিয়ায় নিরসন করে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা ও তার প্রাপ্য সাজার মুখোমুখি করতে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ উদ্দেশ্যে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা ও আইনী কার্যক্রম একইসঙ্গে চলছে। যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কাজ করছে। দ্রুতই ফলাফল পাওয়া যাবে।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পলাতক আসামীদের বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত বিদেশে পলাতক আসামীদের দেশে ফিরিয়ে এনে শান্তি কার্যকর করার লক্ষ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ৫ জন পলাতক আসামী লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আব্দুর রশিদ, মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম, মেজর (অব.) নূর চৌধুরী, রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন খান ও লে. কর্নেল (অব.) রাশেদ চৌধুরী এবং একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পলাতক আসামী মাওলানা মো. তাজউদ্দিন, হারিছ চৌধুরী ও রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে বাবু ওরফে রাতুল বাবুর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা আছে। পলাতক আসামীরা যে দেশে অবস্থান করছে, সে দেশের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তাদেরকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রচলিত কূটনীতির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের পররাষ্ট্র মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রী ও সিনিয়র কর্মকর্তা পর্যায়ে সার্বক্ষণিক কূটনৈতিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এছাড়া দেশগুলোর সঙ্গে সরকারের যেকোন পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে দেওয়ার ইস্যুটি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপন করা হচ্ছে। যে সকল পলাতক খুনিদের অবস্থান সম্পর্কে এখনো সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি, তাদের অবস্থান খুঁজে বের করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাগুলো নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

সরকারি দলের সংসদ সদস্য মো. আসাদুজ্জামান আসাদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, খুনি ফারুক-রশিদরা আগে নিজ থেকেই জাতির পিতাকে হত্যার পরিকল্পনা করে, যেটা জিয়া জানতো। অথচ জাতির পিতাই মেজর জিয়াকে ১৯৭২ সালে কর্নেল এবং ১৯৭৩ সালে ব্রিগেডিয়ার এবং একই বছরে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতির চেয়ারে নিজেকে আজীবন আসীন করে রাখার বাসনা নিয়ে আইয়ুব খানের অনুকরণে সেনাছাউনিতে বসে দলছুট রাজনীতিবিদদের নিয়ে বিএনপি গঠন করে। তিনি যেমন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন, তেমনি অবৈধভাবেই বিএনপি সৃষ্টি করেন। তিনি আরো জানান, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমানের হাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করে একাধারে সেনা প্রধান ও রাষ্ট্রপতির পদ দখল করেন।

ইতিহাসের ঘৃণ্যতম হত্যাকান্ডে জিয়ার সংশ্লিষ্টতা ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা জানান, খুনি জিয়া তো রক্তাক্ত হাতেই খাবার খেতে বসতেন এবং খেতে খেতেই ফাঁসির আদেশে স্বাক্ষর করতেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা-কর্মী নিহত হয়। জিয়া ইনডেমনিটি জারি করে জাতির পিতার খুনীদের রক্ষা করে। তাদেরকে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে চাকুরি দিয়ে পুনর্বাসন করে। ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর দালাল আইন বাতিল করে সাজাপ্রাপ্ত ১১ হাজার রাজাকার ও আলবদরকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেয়। যুদ্ধাপরাধী দল জামাত ও যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়। যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানী নাগরিক গোলাম আজমকে দেশে ফিরিয়ে এনে এবং স্বাধীনতাবিরোধী শাহ আজিজ ও আলীমকে মন্ত্রী বানায়। স্বাধীনতা বিরোধীদের ছেড়ে দিয়ে তাদের পুনর্বাসন ও মন্ত্রী বানানোর মধ্য দিয়ে জিয়া প্রমাণ করে, সে পরাজিত শক্তির দালাল। জিয়ার সাড়ে ৫ বছরের শাসন আমলে ২১টি ক্যু ও পাল্টা-ক্যু হয়। অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল তাহেরকে সে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী জানান, আওয়ামী লীগই স্বৈরাচারের হাত থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে। ১৯৯১ সালে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া সরকার গঠন করে। যে তার স্বামীকে অনুসরণ করে যুদ্ধাপরাধী নিজামী ও মুজাহিদকে মন্ত্রী বানিয়ে তাদের গাড়িতে উপহার দেয় লক্ষ শহীদের রক্তে ভেজা জাতীয় পতাকা। বঙ্গাবন্ধুর খুনী রশীদ ও হুদাকে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনে এমপি বানিয়ে খালেদা জিয়া প্রমাণ করেন, বঙ্গবন্ধুর খুনীরা তার আত্মার আত্মীয়তা। তিনি আরো জানান, ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামাত জোট দুঃসহ অত্যাচার-নির্যাতন চালায়। যা বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে প্রতিহিংসার জঘণ্য কালো অধ্যায় হিসেবে মানুষ মনে রাখবে। ২০০১ সালে কারচুপির নির্বাচনে জনগণের ভোট কেড়ে নিয়ে বিএনপি-জামাত জোট রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে।

বিএনপি-জামাতের দুঃশাসন, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড এবং দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দমননীতির ফলে দেশের অবস্থা চরম বিপর্যন্ত ও বিশৃঙ্খলাপূর্ণ ছিল। বিএনপি জঙ্গিবাদে মদদ দিয়ে জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ, বাংলা ভাই ইত্যাদি সৃষ্টি করে দেশব্যাপী সন্ত্রাসী তান্ডবলীলা চালায়। আমাকে হত্যার উদ্দেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে। এতে আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করে এবং পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। অনেককেই পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। শুধু আমার উপরেই ১৯ বার হত্যাচেষ্টায় হামলা করেছে। আওয়ামীলীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী এসএএমএস কিবরিয়া এবং সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টার ও মমতাজউদ্দিনসহ ২১ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল।

একই প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, একমাত্র আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে মানুষের উন্নয়ন ও কল্যাণে কাজ করেছে। আমরা জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করি, দেশের উন্নয়ন করি। জাতির পিতার নীতি অনুসরণ করে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন আমাদের মূল লক্ষ্য। মানুষের জীবনের শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাব।

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা জানান, সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নকল্পে ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আলোকে রাশিয়া, চীন, তুরস্ক, ভারতসহ সমরাস্ত্র শিল্পে উন্নত বিভিন্ন দেশ থেকে সমরাস্ত্র ক্রয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে, যা ভবিষ্যতে সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি আরো জানান, বাহিনীগুলোর গঠন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। বর্তমানে তার বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলছে।