শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল, ২০২৪ সালের জুলাই গণহত্যা মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল। আন্দোলন দমনে দেড় হাজার মানুষের প্রাণহানি।
নিজস্ব প্রতিবেদক :
২০২৪ সালের ‘জুলাই গণহত্যা’–সংক্রান্ত মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। মামলার বাকি দুই অভিযুক্ত হলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবু সাঈদ মামুন।
রোববার (১ জুন) ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসজুড়ে দেশে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়, তার প্রধান নির্দেশদাতা ও মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন শেখ হাসিনা। অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতেই সে সময় সরকার নিপীড়নের পথে যায়।
এর আগে গত ১২ মে তদন্ত সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে ‘জুলাই গণহত্যা’র জন্য তাঁকে সরাসরি দায়ী করা হয়।
আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি পরিচালনা করেন অতিরিক্ত চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর প্রস্তুতির নির্দেশ দেন। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী সপ্তাহে।
প্রসঙ্গত, এ মামলার বিচার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতির বিষয়েও আদালতের বিবেচনায় রয়েছে।
২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এক বিশাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন। আন্দোলনের সূত্রপাত হয় পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক পক্ষপাত এবং নিয়োগ-ভিত্তিক বৈষম্যের প্রতিবাদে। এই আন্দোলনে প্রধানত তরুণ শিক্ষার্থীরা যুক্ত হয়, যাঁদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সরকার দাবি করে, আন্দোলনটি ছিল “সাজানো ও উসকানিমূলক”, তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ভাষ্যমতে, আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংঘটিত।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে আন্দোলন দমনে নামে। বিভিন্ন শহর ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নির্বিচার গুলি চালানো হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, প্রায় ১,৫০০ মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার আহত হন। এ ঘটনাকে অনেকেই ‘নতুন প্রজন্মের ওপর গণহত্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
ঘটনার আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াও ছিল প্রবল। জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন সংগঠন ঘটনাটি তদন্তের আহ্বান জানায়। এরপরই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে প্রাথমিক তদন্তের নির্দেশ দেয়।