সমাজকাল প্রতিবেদক :
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বহুল আলোচিত জুলাই গণহত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। সোমবার (১২ মে) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তদন্ত দল চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে এই প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতে গতবছরের জুলাই-আগস্ট সময়কালে সংঘটিত গণহত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনার নাম উঠে এসেছে। গণহত্যার ঘটনাগুলোর মধ্যে চানখারপুল, আজিমপুর, রামপুরা ও মিরপুরের সংঘাত ও নির্বিচার হত্যাকাণ্ডগুলোর বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদনেও স্থান পেয়েছে।
এর আগে গত ৯ মে এক ফেসবুক পোস্টে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, “শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট ১২ মে দাখিল করা হবে বলে আশা করছি। এরপরই ‘ফরমাল চার্জ’ দাখিলের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে।”
তিনি আরও জানান, “ইতোমধ্যে চানখারপুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পৃথক তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। ওই হত্যাকাণ্ডের দায়ে চলতি সপ্তাহেই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হবে।”
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তদন্ত প্রতিবেদন একটি বড় ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ এটি স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আনুষ্ঠানিক তদন্তের ফল প্রকাশ করল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলার পরবর্তী ধাপে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে চার্জ গঠন ও শুনানি শুরু হবে।
🔍 ব্যাকগ্রাউন্ড: কী ছিল জুলাই গণহত্যা?
২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় কোটাপ্রথা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র-যুব সমাজের আন্দোলন নতুন মাত্রা নেয়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে ‘সমঅধিকারের শিক্ষা নীতি’ বাস্তবায়নের দাবিতে। আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা তখন দাবি করেছিলেন, কোটানির্ভর নিয়োগ, ভর্তি ও বৃত্তি ব্যবস্থার মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।
আন্দোলনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় তৎকালীন সরকার। ২০২৪ সালের ১৫ থেকে ২৯ জুলাইয়ের মধ্যে, ঢাকার চানখারপুল, আজিমপুর, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, সাভারসহ একাধিক স্থানে ব্যাপক পুলিশি ও আধাসামরিক অভিযানে ছাত্রদের ওপর হামলা চালানো হয়।
স্বাধীন তদন্ত সংস্থাগুলোর মতে, এই সময় অন্তত ২০০ জনের বেশি ছাত্র, তরুণ ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হন এবং হাজারো মানুষ নিখোঁজ বা আহত হন। গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর রিপোর্টে উঠে আসে নির্বিচার গুলি, গুম, নারী নির্যাতন এবং আন্দোলন দমনকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া ভয়াবহতা।
কেন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ?
তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউটরের দাবি অনুযায়ী, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অভিযানের রাজনৈতিক নির্দেশদাতা ছিলেন। তার অনুমোদন ও মৌখিক নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘শত্রুদমনমূলক’ অপারেশনে নামে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জুলাই গণহত্যাকে একটি “রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ভর গণহত্যা” হিসেবে চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয় এবং অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে পৃথকভাবে তদন্ত শুরু করে।
বিচার প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর এখন প্রসিকিউশন পক্ষ ফরমাল চার্জ দাখিল করবে। আদালত তা গ্রহণ করলে শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে।
এদিকে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই ঘটনার বিচার ঘিরে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে।