শেখেরটেকে ধর্ষণের শিকার কিশোরী লামিয়ার আত্মহত্যা : ন্যায়বিচারের দাবি নারীপক্ষের
নিজস্ব প্রতিবেদক :
শেখেরটেকে ধর্ষণ ও পরবর্তী লাঞ্ছনা-গঞ্জনার শিকার কিশোরী লামিয়া (১৭) অবশেষে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলেন। গতকাল শনিবার, ২৬ এপ্রিল রাতে রাজধানীর শেখেরটেক ৬ নম্বর রোডের বি/৭০ নম্বর বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন।
পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নের শহীদ জসীম উদ্দিনের কন্যা লামিয়া গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় পিতার কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। পথিমধ্যে নলদোয়ানী এলাকায় সাকিব ও সিফাত নামে দুই যুবক তার পিছু নেয় এবং পার্শ্ববর্তী একটি বাগানে নিয়ে গিয়ে তাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এরপর ধর্ষণকারীরা তার নগ্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
প্রথম দিকে থানায় অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ গড়িমসি করে। তবে ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বাধ্য হয়ে পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ করে এবং অভিযুক্ত দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু পরে তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে যায় এবং মামলা তুলে নিতে লামিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে।
একইসঙ্গে, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লামিয়ার বিরুদ্ধে নানাবিধ অপপ্রচার, কুৎসিত মন্তব্য এবং চরিত্র হননের প্রচারণা চলতে থাকে। এই সকল মানসিক যন্ত্রণার ভার সইতে না পেরে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত লামিয়া আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হন।
নারীপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “এটি লামিয়ার ব্যর্থতা নয়; এটি রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা, দুর্নীতিমুক্ত বিচারপ্রক্রিয়া ও মানসিক সহায়তার অভাবের ফল।”
নারীপক্ষ দাবি জানিয়েছে:
- ধর্ষণকারী ও পরবর্তী লাঞ্ছনাকারী প্রত্যেককে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
- পুলিশ প্রশাসনের গাফিলতি, দুর্নীতি ও অসাধু প্রভাব প্রতিপত্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
- ধর্ষণের শিকার নারীদের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা, মানসিক কাউন্সেলিং এবং আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
- সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার ও নারীর প্রতি সর্বত্র সংবেদনশীল আচরণ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
নারীপক্ষ আরও জানিয়েছে, যাতে আর কোনো নারীকে লামিয়ার মতো নির্মম পরিণতির শিকার হতে না হয়, সে লক্ষ্যে অবিলম্বে সর্বস্তরে প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।