সমাজকাল ডেস্ক :
আজ ২২ মে, গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে বছরের ১৪২তম দিন (অধিবর্ষে ১৪৩তম)। বছর শেষ হতে বাকি আছে আর ২২৩ দিন। ইতিহাসের পাতায় আজকের এই দিনে জন্ম নিয়েছেন অনেক খ্যাতিমান মানুষ। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা।
🟦 রাজা রামমোহন রায় (১৭৭২ – ১৮৩৩)
ভারতের সামাজিক ও ধর্মীয় পুনর্জাগরণের অন্যতম পুরোধা, রামমোহন রায় ছিলেন ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠাতা এবং যুক্তিবাদী চিন্তার পথিকৃৎ। তিনি নারীর অধিকার, সতীদাহ প্রথা বিলোপ, বিধবা বিবাহ, আধুনিক শিক্ষা এবং ধর্মীয় সহনশীলতা নিয়ে কাজ করেন। ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় পাণ্ডিত্যসম্পন্ন রামমোহন ছিলেন সংবাদপত্র প্রকাশে ভারতের অগ্রদূতদের একজন। তিনি ভারতীয় নবজাগরণের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।
🟦 কিশোরীচাঁদ মিত্র (১৮২২ – ১৮৭৩)
বাঙালি সমাজে প্রথম প্রজন্মের ইংরেজি লেখক ও সমাজকর্মী হিসেবে পরিচিত কিশোরীচাঁদ মিত্র ছিলেন আধুনিক মননের ধারক। তিনি সাহিত্য, সমাজ এবং রাজনীতি নিয়ে গভীরভাবে ভাবতেন। তাঁর রচনায় সময়ের সামাজিক বৈষম্য, শিক্ষার গুরুত্ব এবং সংস্কারমূলক দৃষ্টিভঙ্গি উঠে এসেছে। তিনি ‘লালমোহন দে’ ছদ্মনামে রচনা করতেন এবং ব্রিটিশ ভারতের প্রশাসনিক সংস্কারে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন।
🟦 স্যার আর্থার কোনান ডয়েল (১৮৫৯ – ১৯৩০)
গোয়েন্দা সাহিত্যের মহানায়ক, শার্লক হোমস চরিত্রের স্রষ্টা স্যার আর্থার কোনান ডয়েল ব্রিটিশ সাহিত্যের ইতিহাসে স্থায়ী আসন পেয়েছেন। চিকিৎসক পেশা থেকে লেখালেখিতে এসে তিনি গোয়েন্দা কাহিনিতে বাস্তবতা, বিজ্ঞান ও বিশ্লেষণী শক্তির অপূর্ব মিশ্রণ ঘটান। তাঁর রচিত ‘অ্যা স্টাডি ইন স্কারলেট’, ‘দ্য হাউন্ড অব দ্য বাস্কারভিলস’ ইত্যাদি গ্রন্থ আধুনিক ডিটেকটিভ সাহিত্যের ভিত্তি রচনা করে।
🟦 অ্যার্জে (১৯০৭ – ১৯৮৩)
আসল নাম জর্জ রেমি হলেও ‘অ্যার্জে’ নামেই তিনি পরিচিত বিশ্বজুড়ে। বেলজিয়ান এই কমিক শিল্পী সৃষ্টি করেন কিংবদন্তি কমিক সিরিজ “টিনটিন”। অ্যাডভেঞ্চার, ইতিহাস, বিজ্ঞান আর মানবিক মূল্যবোধে ভরপুর টিনটিনের গল্পগুলো শুধু শিশুদের নয়, প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝেও সমান জনপ্রিয়। তাঁর আঁকার স্টাইল, “লিন ক্লেয়ার” বা পরিষ্কার রেখাচিত্র, কমিক আর্টের ধারা বদলে দিয়েছে।
🟦 লরেন্স অলিভিয়ে (১৯০৭ – ১৯৮৯)
ইংরেজ নাট্যজগতের কিংবদন্তি, লরেন্স অলিভিয়ে ছিলেন অভিনয়ের প্রকৃত কুশলী। তিনি উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের নাটকগুলোকে মঞ্চে ও চলচ্চিত্রে তুলে ধরেন গভীর মনোযোগ ও কৌশলের সঙ্গে। তিনি শুধু একজন অভিনেতাই ছিলেন না, একজন মঞ্চপরিচালক, প্রযোজক এবং ব্রিটেনের জাতীয় থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন। অভিনয়ের জন্য তাঁকে নাইট উপাধি দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে তিনি “ব্যারন” হন।
🟦 সুনীতি চৌধুরী ঘোষ (১৯১৭ – ১৯৮৮)
ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী নারী হিসেবে পরিচিত সুনীতি চৌধুরী ছিলেন সাহস, সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগের প্রতীক। মাত্র ১৬ বছর বয়সে কুমিল্লায় বিপ্লবী অভিযান চালিয়ে পুলিশ সুপার চার্লস স্টিভেনসনকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। এই ঘটনায় তিনি ও তার সাথী প্রফুল্ল বালিকে গ্রেফতার করা হয়। কারাবরণ শেষে তিনি দীর্ঘদিন সমাজসেবায় যুক্ত ছিলেন। তাঁর সংগ্রাম ভারতীয় উপমহাদেশের নারীর রাজনৈতিক আত্মপ্রকাশের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
🟦 জর্জ বেস্ট (১৯৪৬ – ২০০৫)
উত্তর আয়ারল্যান্ডের জর্জ বেস্ট ছিলেন এক বিস্ময়কর ফুটবল প্রতিভা। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাবের হয়ে খেলে তিনি ইউরোপিয়ান কাপ জয় করেন এবং ১৯৬৮ সালে “ব্যালন ডি’অর” পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর খেলার শৈলী, গতি ও ড্রিবলিং-দক্ষতা তাঁকে ক্লাসিক ফুটবলারদের সারিতে নিয়ে গেছে। মাঠের বাইরে বিতর্ক থাকলেও মাঠে তিনি ছিলেন এক অনবদ্য কিংবদন্তি।
🟦 স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত (১৯৫০ – ২০২১)
বাঙালি থিয়েটার ও চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। তিনি সত্যজিৎ রায়ের ঘরে বাইরে ছবিতে ‘বিমলা’ চরিত্রে অসাধারণ অভিনয়ের মাধ্যমে পরিচিত হন সারাদেশে। দীর্ঘ চার দশক ধরে তিনি থিয়েটার জগতে শক্তিশালী উপস্থিতি রেখেছেন, শৌভিক নাট্যগোষ্ঠীর অন্যতম মুখ্য অভিনেত্রী ছিলেন। তাঁর অভিনয়ে ছিল বাঙালির আত্মা, নারীর জটিল মনস্তত্ত্ব ও সমাজের প্রতিচ্ছবি।
🟦 রাজকুমারী এলিজাবেথ (১৭৭০ – মৃত্যু সাল অজানা)
ব্রিটিশ রাজপরিবারের রাজকন্যা হিসেবে জন্ম নেওয়া এলিজাবেথ ছিলেন তৎকালীন ইউরোপীয় রাজনীতির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। তিনি ছিলেন রাজা জর্জ তৃতীয়-এর কন্যা এবং রাজপরিবারের একজন সম্মানীয় সদস্য। তাঁর জীবনচর্যা এবং ঐতিহাসিক ভূমিকাও ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।