যমজ ভাইবোনেরা কি একই জিনিসের প্রতি অ্যালার্জিক হন?
সমাজকাল ডেস্ক :
অ্যালার্জি — হোক সেটা বসন্তকালের পরাগকণার কারণে হাঁচি অথবা কোনো খাবারে শ্বাসকষ্ট — আসলে আমাদের জিন এবং পরিবেশের মিলিত প্রভাবে ঘটে। দু’জন মানুষের মধ্যে এই দুই বিষয়ের যত মিল থাকে, তাঁদের একি ধরনের অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি। তাই, যমজ ভাইবোনদের একসঙ্গে একই অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি। তবে বিষয়টি এখানেই শেষ নয়।
অ্যালার্জি কী?
আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) অ্যান্টিবডি নামক বিশেষ এক ধরনের প্রোটিন তৈরি করে, যেগুলো বিপজ্জনক জীবাণু বা পদার্থের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। যখন শরীর কোনো সাধারণ ও ক্ষতিকর নয় এমন বস্তু (যেমন- ধুলাবালি, পরাগরেণু বা খাবার) কে ভুল করে ক্ষতিকর ভাবে ধরে ফেলে, তখন অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। অ্যান্টিবডিগুলো সেই বস্তুগুলোর সঙ্গে লেগে গিয়ে ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে, যার ফলে হাঁচি, নাক বন্ধ বা জল পড়া, চোখ চুলকানো বা কাশি হয়। কখনো কখনো এই প্রতিক্রিয়া মারাত্মক রূপ ধারণ করে, যাকে বলে অ্যানাফাইল্যাক্সিস, যা জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
অ্যানাফাইল্যাক্সিসের সময় ইপিনেফ্রিন (অ্যাড্রেনালিন) ইনজেকশন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। বর্তমানে ইপিনেফ্রিন ন্যাজাল স্প্রেও পাওয়া যাচ্ছে, যা দ্রুত কাজ করে।
অ্যালার্জি কাদের হয়?
কেউ পোলেন, ধুলো, পশুর লোম, এমনকি খাবারের প্রতি অ্যালার্জিক হতে পারে। খাদ্য অ্যালার্জি মোট জনসংখ্যার ৪-৫ শতাংশের মধ্যে দেখা যায়। সবচেয়ে সাধারণ খাদ্য অ্যালার্জির মধ্যে রয়েছে গরুর দুধ, ডিম, গম, সয়াবিন, চিনাবাদাম, বাদাম, মাছ, শামুক এবং তিল। কেউ কেউ সময়ের সাথে সাথে এই অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পায়, কেউ আবার আজীবন ভোগে।
জীবাণুর সংস্পর্শের অভাবও অ্যালার্জির ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা খামারে বড় হয়েছে, ছোটবেলা থেকে পোষা প্রাণী রেখেছে বা অনেক ভাইবোনের সঙ্গে বড় হয়েছে, তাদের মধ্যে অ্যালার্জির ঝুঁকি কম। অন্যদিকে, শহরে বড় হওয়া শিশুরা এবং ধূমপায়ী পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশুরা তুলনামূলক বেশি অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়।
শৈশবে নানা খাবার দ্রুত চেখে দেখলে খাদ্য অ্যালার্জির ঝুঁকি কমে। আবার কোনো কোনো পেশা (যেমন নাপিত, বেকার, গাড়ির মেকানিক) থেকেও পরিবেশগত অ্যালার্জি তৈরি হতে পারে।
যমজদের অ্যালার্জি: এক না ভিন্ন?
অবশ্যই যমজ ভাইবোনেরা অনেক সময় একই অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়, তবে সবসময় নয়।
অস্ট্রেলিয়ার এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ যমজ ভাইবোন উভয়েই পরিবেশগত অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হন। একই ডিম্বাণু (আইডেন্টিক্যাল) যমজরা, যারা ১০০ শতাংশ একই জিন বহন করে, তাদের মধ্যে একই ধরনের অ্যালার্জির হার বেশি। অন্যদিকে, ভিন্ন ডিম্বাণু (ফ্রেটার্নাল) যমজরা, যাদের মধ্যে মাত্র ৫০ শতাংশ জিনের মিল, তাদের মধ্যে এই মিল তুলনামূলক কম।
বিশেষ করে চিনাবাদামের অ্যালার্জির ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যদি একজন আইডেন্টিক্যাল যমজ চিনাবাদামে অ্যালার্জিক হয়, তাহলে অপরজনের অ্যালার্জিক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
তাহলে কি যমজরা সবসময় একইরকম অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়?
না, তারা সবসময় একই অ্যালার্জি পায় না। যদি যমজ ভাইবোনদের আলাদা পরিবেশে বড় করা হয়— একজন খামারে, আরেকজন শহরে; একজন ধূমপানমুক্ত পরিবেশে, আরেকজন ধূমপায়ী পরিবারের মধ্যে— তাহলে তাঁদের অ্যালার্জি হওয়ার প্রবণতা ভিন্ন হতে পারে।
সুতরাং, যমজরা একই অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও পরিবেশ, অভ্যাস এবং ছোটবেলার অভিজ্ঞতা তাঁদের অ্যালার্জির ধরন আলাদা করে দিতে পারে। এ নিয়ে আরও গবেষণা চলছে, এবং ভবিষ্যতে এই বিষয়ে বিজ্ঞানীরা আরও গভীরভাবে জানতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
(ব্রিয়েন হেইস হ্যানি, ইমিউনোলজিস্ট, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র। “দ্য কনভারসেশন” এর “Curious Kids” সিরিজ থেকে অনূদিত ও সামান্য সংক্ষিপ্ত।)