সমাজকাল ডেস্ক:
মৃত্যুদিনে তাদের স্মরণ, ৩১ মে | ইতিহাসের এই দিনে, গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে বছরের ১৫১তম (অধিবর্ষে ১৫২তম) দিন। বছর শেষ হতে বাকি আর ২১৪ দিন। এই দিনে ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন কিছু বিস্ময়কর প্রতিভা, যাঁরা নিজেদের কর্মগুণে আলোকিত করেছেন গণিত, চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, সাহিত্য, ক্রীড়া ও সংস্কৃতির জগৎ।
🔹 ১৮৩২ – এভারিস্ত গালোয়া (Évariste Galois)
মাত্র ২০ বছর বয়সে প্রাণ হারানো এই ফরাসি গণিতবিদের জীবনের গল্পটি এক অদ্ভুত ট্র্যাজেডির মতো। গ্যালোয়া তত্ত্ব বা ‘Galois Theory’ আধুনিক বিমূর্ত বীজগণিতের ভিত্তি হিসেবে গণ্য হয়। একটি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বযুদ্ধে নিহত হওয়ার আগের রাতে তিনি তাঁর সমস্ত গাণিতিক ভাবনার সারাংশ লিখে যান। এই পাণ্ডুলিপিগুলোই পরে বিপ্লব ঘটায় গণিত জগতে। আজও বিশ্বের গণিতবিদরা গ্যালোয়াকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
🔹 ১৯১০ – এলিজাবেথ ব্ল্যাকওয়েল (Elizabeth Blackwell)
বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম নারী চিকিৎসক হিসেবে খ্যাত, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে মেডিকেল ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। নারীদের চিকিৎসাবিদ্যায় প্রবেশাধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে তিনি সক্রিয় ভূমিকা নেন এবং পরবর্তীতে মহিলা চিকিৎসকদের জন্য নিজস্ব মেডিকেল কলেজ স্থাপন করেন। তাঁর প্রয়াণ নারী-স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাক্ষেত্রে এক সুদীর্ঘ সংগ্রামের পরিসমাপ্তি হয়ে দেখা দিয়েছিল।
🔹 ১৯৬৮ – অমিয়চরণ ব্যানার্জি
ভারতের খ্যাতিমান বাঙালি গণিতবিদ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে শিক্ষা ও গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাঁর প্রজ্ঞা ও প্রশাসনিক দক্ষতা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনায় এক নতুন মাত্রা এনেছিল।
🔹 ১৯৮৬ – জেমস রেইনওয়াটার (James Rainwater)
পরমাণু পদার্থবিদ্যায় গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের জন্য ১৯৭৫ সালে নোবেলজয়ী এই মার্কিন বিজ্ঞানী ‘নিউক্লিয়ার শেল মডেল’-এর উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখেন। পরমাণু শক্তির ব্যাখ্যায় তাঁর তত্ত্ব আজও আধুনিক পদার্থবিদ্যার ভিত্তি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ।
🔹 ২০০২ – সুভাষ গুপ্তে
ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্পিনার হিসেবে ধরা হয় তাঁকে। তাঁর সময়ে বিশ্ব ক্রিকেটে ভারতীয় দল যখন নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যস্ত, তখন তিনি ছিলেন নির্ভরতার প্রতীক। ১৯৫০ ও ৬০-এর দশকে ভারতের স্পোর্টিং ইতিহাসে তাঁর অবদান স্মরণীয়।
🔹 ২০০৪ – বিক্রমণ নায়ার
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদ। সাংবাদিকতায় বস্তুনিষ্ঠতা ও শিক্ষায় প্রগতিশীল চিন্তাধারা তাঁর কাজের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল। তিনি বহু প্রজন্মের পাঠক ও শিক্ষার্থীর চিন্তার জগৎকে সমৃদ্ধ করেছেন।
🔹 ২০০৬ – রেইমন্ড ডেভিস জুনিয়র (Raymond Davis Jr.)
নিউট্রিনো নিয়ে গবেষণার জন্য নোবেলজয়ী মার্কিন রসায়নবিদ ও পদার্থবিদ। তিনি সৌর পদার্থবিদ্যায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেন, যা মহাকাশ গবেষণায় এক যুগান্তকারী ধাপ।
🔹 ২০০৯ – কমলা দাস
ভারতের মালায়ালম ও ইংরেজি সাহিত্যের অগ্রণী লেখিকা। তার আত্মজৈবনিক লেখা “My Story” তীব্র আলোচনার জন্ম দেয়। নারীজীবন, কামনা, আত্মপরিচয় নিয়ে তাঁর লেখনী সাহিত্য জগতে এক অসাধারণ সাহসিকতার দৃষ্টান্ত। তিনি ছিলেন নারীবাদী সাহিত্যের এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর।
🔹 ২০১৪ – মার্থা হাইয়ার (Martha Hyer)
হলিউডের ১৯৫০ ও ৬০-এর দশকের গ্ল্যামারাস অভিনেত্রীদের একজন। “Some Came Running” চলচ্চিত্রের জন্য অস্কার মনোনয়ন পাওয়া এই অভিনেত্রী তৎকালীন আমেরিকান সমাজ ও সংস্কৃতিকে পর্দায় চিত্রিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
🔹 ২০২০ – আবদুল মোনেম
বাংলাদেশের অন্যতম খ্যাতিমান শিল্পপতি, ‘আবদুল মোনেম লিমিটেড’-এর প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর হাত ধরে বাংলাদেশে আইসক্রিম, নির্মাণ, খাদ্য ও পানীয় শিল্পে এক নতুন যুগের সূচনা ঘটে। পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন বড় প্রকল্পে তাঁর কোম্পানির অবদান উজ্জ্বল নিদর্শন হয়ে আছে।
🔹 ২০২২ – কৃষ্ণকুমার কুন্নথ (কে কে)
প্রিয় কণ্ঠশিল্পী কে কে, যাঁর গান ‘পল’, ‘তড়প তড়প’, ‘ইয়ারোঁ’, প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আবেগে মোহিত করেছে। কোলকাতায় এক লাইভ পারফরম্যান্সের পর হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। কে কে-র মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ভারতীয় নেপথ্য সংগীত হারায় এক অনন্য রত্নকে।
তাদের জীবন আমাদের শেখায় সাহস, স্বপ্ন ও সাধনার কথা। মৃত্যুদিনে তাঁদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে সমাজকাল পরিবার জানায় গভীর শ্রদ্ধা।