১৫ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে কেন যুক্তরাষ্ট্র  

 

 

সমাজকাল ডেস্ক:

 

এক আকস্মিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান—যা এক দশকের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর সামরিক উত্তেজনার মাঝখানে এলো। মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম এই ঘোষণাটি দেন, দাবি করেন, এই ‘পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি’র নেপথ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা।

🕊 যুদ্ধবিরতির পটভূমি

১০ মে শনিবার রাত সাড়ে ৬টায় (বাংলাদেশ সময়) ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন যে দুই দেশ দীর্ঘ এক রাতের আলোচনা শেষে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, শুধু যুদ্ধবিরতিই নয়, বরং একটি নিরপেক্ষ স্থানে দুই দেশের মধ্যে পরবর্তী পর্যায়ে আলোচনারও প্রস্তুতি রয়েছে।

 

তবে ভারত বিষয়টি ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে। নয়াদিল্লি বলেছে, এই চুক্তি হয়েছে ‘দুই দেশের মধ্যে সরাসরি আলোচনা’র মাধ্যমে এবং এতে কোনো আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা নেই। পাকিস্তান অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে সাধুবাদ জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, “ট্রাম্পের নেতৃত্ব ও সক্রিয় ভূমিকার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।”

 

🔥 উত্তপ্ত সংঘাতের প্রেক্ষাপট

এই যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টা আগেও দুই দেশের মধ্যে মারাত্মক পাল্টাপাল্টি হামলা হয়েছে। পাকিস্তানের অভিযোগ, ভারত তাদের রাজধানী ইসলামাবাদ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া সামরিক ঘাঁটিগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। জবাবে পাকিস্তানও ভারতের বিমানঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালায়।

 

কাশ্মীরের শ্রীনগর ও জম্মুতে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। ইসলামাবাদ বলছে, এটি ভারতের আগ্রাসনের “উচিত জবাব”।

 

🕯 সংঘাতের সূত্রপাত

২৬ এপ্রিল ভারতশাসিত কাশ্মীরের পাহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি পর্যটক নিহত হন। ভারত এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে “অপারেশন সিনদুর” নামে পাল্টা সামরিক অভিযান শুরু করে।

 

এরপর দুই দেশ একে অপরের ভূখণ্ডে ব্যাপক আক্রমণ চালাতে থাকে, যা অতীতে সীমিত সংঘর্ষের চেয়ে অনেক গভীর ও বিস্তৃত রূপ নেয়।

 

যুক্তরাষ্ট্র কেন মধ্যস্থতায়?

যদিও প্রথমে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স জানান, “এই যুদ্ধ আমাদের বিষয় না,” তবুও পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় পরিস্থিতি এতটাই খারাপের দিকে যায় যে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকে হস্তক্ষেপে বাধ্য হতে হয়।

 

তথ্য ছিল, যদি তৎক্ষণাত সমাধান না আসে, তবে তা পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে যেতে পারে।

 

⚠ যুদ্ধবিরতি কি টিকবে?

এই প্রশ্ন এখন সবচেয়ে বড়। যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উভয় পক্ষই একে অপরকে চুক্তি ভাঙার অভিযোগে দোষারোপ করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী বলেন, পাকিস্তান একাধিকবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। অপরদিকে, ইসলামাবাদও ভারতকে অভিযুক্ত করলেও বলেছে, তারা “চুক্তি রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

 

ভিসা স্থগিত, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এবং নদীজল বণ্টন চুক্তি স্থগিতের মতো সিদ্ধান্তগুলোও এখনও বহাল রয়েছে। সেগুলোও এই বিরতি কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে।

 

 

ভারত ও পাকিস্তান হঠাৎ করেই যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায়। তবে পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস, নানান বিরোধ এবং চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ এই যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।