ভারতের পুশ-ইন অব্যাহত, খাগড়াছড়ি দিয়ে ১৩২জন, বিএসএফের পুশ-ইন অব্যাহত, খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে এখন পর্যন্ত ১৩২ জন বাংলাদেশিকে পুশ-ইন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১৮ জনকে পরিচয় যাচাই করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে প্রশাসন। স্থানীয়রা বলছেন, এই আচরণ সম্পূর্ণ অমানবিক।
সমাজকাল ডেস্কে :
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) অব্যাহতভাবে বাংলাদেশি নাগরিকদের পুশ-ইন করে চলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ পর্যন্ত খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, রামগড় ও পানছড়ি সীমান্ত দিয়ে ১৩২ জন বাংলাদেশিকে পুশ-ইন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১৮ জনকে পরিচয় যাচাই করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে প্রশাসন।
৭ মে-তে শুরু, এখনও অব্যাহত পুশ-ইন
মাটিরাঙ্গার গোমতী ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল হাসেম ৭ মে ফজরের নামাজে যাওয়ার সময় প্রথম ২৭ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে সীমান্তে জড়ো হতে দেখেন। পরে জানা যায়, তাদের বিএসএফ পুশ-ইন করেছে। একইদিন মাটিরাঙ্গার তাইন্দং ও পানছড়ির লোগাং সীমান্ত দিয়ে আরও ৫৩ জনকে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয় বিএসএফ। ওই দিনই মোট ৮০ জনকে পুশ-ইন করা হয়।
নদীতে ফেলে দেওয়ার মর্মান্তিক অভিযোগ
২২ মে রামগড় সীমান্তের ফেনী নদীতে একই পরিবারের পাঁচজনকে কোমড়ে প্লাস্টিকের বোতল বেঁধে ফেলে দেওয়া হয়। ভাসতে ভাসতে তারা তীরে উঠে আসে। ২৬ মে আবার ৩৩ জনকে নারী-শিশুসহ পুশ-ইন করা হয়।
সর্বশেষ, ৩০ মে সকালে নতুন করে আরও ১৪ জনকে পুশ-ইন করা হয়। এ নিয়ে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩২ জনে।
পুশ-ইন হওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিতকরণ ও হস্তান্তর
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, “এখন পর্যন্ত আমরা ১৩২ জনের মধ্যে ১১৮ জনকে পরিচয় যাচাই করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। স্থানীয় প্রশাসন ও বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।”
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম জানান, “নতুন আসা ১৪ জনের মধ্যে ১২ জন কুড়িগ্রাম এবং ২ জন দিনাজপুরের বাসিন্দা। এদের পরিচয় যাচাই চলছে।”
পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা নাসরিন বলেন, “পানছড়ি সীমান্ত দিয়ে ৪৪ জনকে পুশ-ইন করা হয়েছে, যাদের সবাইকে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
গুজরাট-হরিয়ানায় কাজ করতেন পুশ-ইন হওয়া বাংলাদেশিরা
স্থানীয় সূত্র ও পুশ-ইন হওয়া ব্যক্তিদের বরাতে জানা যায়, অধিকাংশই গুজরাট ও হরিয়ানায় ইটভাটা বা নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। অবৈধ অভিবাসী হিসেবে তাদের আটক করে এক কাপড়ে রাতের আঁধারে বিমানে ত্রিপুরায় পাঠিয়ে সীমান্তে ফেলে আসা হয়।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া : ‘অমানবিক’ পদক্ষেপ
শান্তিপুর গ্রামের শামছুল হক বলেন, “নারী-শিশুদেরও হাত বেঁধে এভাবে সীমান্তে ফেলে দেওয়া অমানবিক। এটা যদি বাংলাদেশি নাগরিকও হয়, তাহলেও কূটনৈতিকভাবে সমঝোতা করে ফেরত পাঠানো উচিত ছিল।”
স্থানীয় সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন লাভলু বলেন, “হাত-পা ও চোখ বেঁধে নদীতে ফেলে দেওয়ার ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন। ভারতের আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ।”
বাংলাদেশের কূটনৈতিক পদক্ষেপ অনিশ্চিত
এ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ বা কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার কোনো ঘোষণা আসেনি।