সমাজকাল ডেস্ক:
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক যুদ্ধোন্মুখ হুঁশিয়ারির জবাবে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান। শুক্রবার ইসলামাবাদে এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতর জানায়, ‘‘উত্তেজক বক্তব্য ও আগ্রাসী ভঙ্গিমা কেবল উপমহাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।’’
পাকিস্তানের জিও টিভির বরাতে জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকাত আলী খান বলেন, ‘‘মোদি সরকারের কল্পিত অভিযোগ ও হুমকির রাজনীতি আসলে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার অপচেষ্টা। ভারত এই অঞ্চলে উত্তেজনা সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি সরাতে চায়।’’
🔴 মোদির হুমকি ও পানিচুক্তি স্থগিত
সম্প্রতি রাজস্থানের এক জনসভায় মোদি বলেন, ‘‘পাকিস্তান আর ভারতের নদীর পানি পাবে না। প্রতিটি জঙ্গি হামলার জন্য পাকিস্তানকে চড়া মূল্য দিতে হবে।’’ তিনি ইঙ্গিত করেন, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরে সংঘটিত হামলার পর ভারতের পক্ষ থেকে ঐতিহাসিক ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ (Indus Waters Treaty) স্থগিত করা হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, ‘‘এই চুক্তি বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এটি আন্তর্জাতিক আইনের আওতাধীন একটি বৈধ দলিল। একতরফাভাবে এই চুক্তি স্থগিত করা আন্তর্জাতিক নীতিমালার লঙ্ঘন।’’
⚠️ যুদ্ধের হুমকি: ‘জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ‘‘একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রকে হুমকি দেওয়া এবং যুদ্ধের বড়াই করা জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। এই ধরণের বক্তব্য দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি বিনষ্ট করছে।’’
তারা আরও উল্লেখ করে, ‘‘এটি ভারতের পক্ষ থেকে জনমত প্রভাবিত করার একটি পুরোনো কৌশল। মূলত কাশ্মীরি জনগণের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর বাস্তবতা আড়াল করতেই পাকিস্তানকে দায়ী করা হচ্ছে।’’
💬 ‘ঘৃণা-নির্ভর কল্পকাহিনি নয়, প্রয়োজন সংলাপ’
বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ে একটি দায়িত্বশীল অংশীদার। ভারতের মিথ্যা প্রচার ও পাকিস্তানকে জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত করার প্রচেষ্টা সত্য থেকে জনতাকে দূরে রাখার চক্রান্তমাত্র।
‘‘ভারতের উচিত কল্পিত গল্প ছড়িয়ে জনমতকে বিভ্রান্ত না করে শান্তিপূর্ণ সংলাপ ও কূটনৈতিক পথে সমাধানের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।’’
🛡️ আত্মরক্ষায় প্রস্তুত পাকিস্তান
পাকিস্তান আবারও জানিয়ে দিয়েছে, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই তাদের মূলনীতি, তবে এটিকে দুর্বলতা ভাবার সুযোগ নেই। বিবৃতিতে স্পষ্ট বলা হয়, ‘‘পাকিস্তানের জনগণ ও সশস্ত্র বাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আগ্রাসনের কোনো চেষ্টার জবাব দেওয়া হবে উপযুক্তভাবে।’’
🌍 আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ‘‘ভারতের আগ্রাসী মনোভাব ও ঘৃণানির্ভর কথাবার্তা দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিকে হুমকির মুখে ফেলছে। বিশ্বের উচিত এই ধরণের উসকানিমূলক আচরণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া।’’
বিবৃতির শেষে বলা হয়, ‘‘যুদ্ধ নয়, শান্তি ও সম্মানের ভিত্তিতেই স্থায়ী সমাধান আসতে পারে। আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার মাধ্যমেই উপমহাদেশে সত্যিকার স্থিতিশীলতা ফিরবে।’’