১৫ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Human-Rights

বাংলাদেশে মৌলিক স্বাধীনতা সংকটে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তীব্র সমালোচনা

সমাজকাল প্রতিবেদক :

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশে মৌলিক স্বাধীনতা সংকটে পড়েছে বলে উদ্বেগ জানিয়েছে। ‘Bangladesh: Review Laws and Protect Human Rights Standards’ শীর্ষক রিপোর্টে সংস্থাটি অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক আইনি পদক্ষেপ, বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিক্রিয়ায় তীব্র সমালোচনা করে।

মৌলিক স্বাধীনতায় সংকট
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত আইনপ্রণয়ন কার্যক্রম মৌলিক অধিকার খর্ব করছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাম্প্রতিক সংশোধনের মাধ্যমে ১২ মে আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম, বক্তব্য, প্রকাশনা ও সমাবেশে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, যা কার্যত দলটিকে নিষিদ্ধ করার শামিল।

সংস্থার এশিয়া বিষয়ক উপপরিচালক মীনাক্ষি গাঙ্গুলি বলেন, “শেখ হাসিনার সরকার বিরোধীদের দমন করেছিল, কিন্তু আওয়ামী লীগের ওপর একই রকম দমননীতি গ্রহণ মৌলিক স্বাধীনতার লঙ্ঘন। ন্যায়বিচার ছাড়া কোনো নিষেধাজ্ঞা গ্রহণযোগ্য নয়।”

জোরপূর্বক গুম: একটি পদ্ধতিগত নকশা?
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের আগস্টে গঠিত অনুসন্ধান কমিশন ১৬৭৬টি জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ পেয়েছে, যার মধ্যে ২০০ জনের অবস্থান এখনো অজানা। এই গুমগুলোকে ‘সিস্টেমিক ডিজাইন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, যার প্রধান শিকার রাজনৈতিক বিরোধীরা।

গুম ও বিচার বিলম্বে ক্ষোভ
‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলামের বাড়ি ঘিরে ফেলা এবং ভিকটিম পরিবারের শঙ্কার কথাও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। বহু পরিবার বিচারহীনতার কারণে হতাশ ও ক্ষুব্ধ।

আইনি জটিলতা ও নতুন ট্রাইব্যুনাল
নতুন আইন অনুযায়ী, রাজনৈতিক দল বা যেকোনো সমর্থক গোষ্ঠীকে ‘সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব। এই আইনের আওতায় ট্রাইব্যুনাল এমন ব্যক্তিকেও অভিযুক্ত করতে পারবে যিনি সামাজিক মাধ্যমে মতপ্রকাশ করেছেন বলে মনে করা হয়। এতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে সীমিত হতে পারে।

রাজনীতিকদের গণগ্রেপ্তার
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, বিপুলসংখ্যক রাজনৈতিক কর্মী, শিল্পী, আইনজীবী ও নাগরিক অধিকারকর্মীকে ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার সমর্থক’ বলে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিচারপূর্ব বন্দিত্বের বিষয়টি উদ্বেগজনক।

🧭 সুপারিশ ও ভবিষ্যৎ করণীয়
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সুপারিশ করেছে—

  • সাবেক সরকারের অপরাধের যথাযথ ও তথ্যভিত্তিক বিচার করতে হবে
  • রাজনৈতিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে হবে
  • নিখোঁজ ব্যক্তিদের অবস্থান প্রকাশ করতে হবে
  • মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য রাষ্ট্রীয়ভাবে সংগ্রহ ও প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে

মীনাক্ষি গাঙ্গুলি বলেন, “আওয়ামী লীগের শাসনকালে যত অন্যায়ই হয়ে থাকুক, সেটার প্রতিকার হতে পারে না নতুন এক দমনমূলক শাসন ব্যবস্থা। মানবাধিকারের পথে এগোতেই হবে।”

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
X
LinkedIn