বব ডিলানের “Ballad of a Thin Man”-এ ফিরে দেখা আজকের পৃথিবীকে
সমাজ কাল ডেস্ক :
কোনো কোনো শিল্পকর্ম এমন হয়—যা একা হাতেই হয়ে ওঠে একটা সময়ের প্রতিচ্ছবি। হতে পারে সেটা একটি গান, একটি সিনেমা, একটি কবিতা, অথবা একটি চিত্রকর্ম। ভাবলে মনে হয়, সেই শিল্পকর্ম নিশ্চয়ই এই সময়েরই সন্তান। অথচ, অনেক সময় দেখা যায়—অতীতের কোনো সৃষ্টি হয়ে ওঠে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে সঠিক ভাষ্যকার।
ঠিক এমনই একটি সৃষ্টি বব ডিলানের ১৯৬৫ সালের গান “Ballad of a Thin Man”।
এই গানটি, প্রায় ছয় দশক পরে এসেও, যেন হুবহু বলছে ২০২৫ সালের কথা।
ডিলান এখনো জীবিত, ৮৩ বছর বয়সেও ট্যুর করছেন। কিন্তু তাঁর সবচেয়ে উজ্জ্বল সময় ছিল ষাটের দশকের মাঝামাঝি—যখন প্রকাশ পায় “Bringing It All Back Home,” “Highway 61 Revisited” ও “Blonde on Blonde”। এর মধ্যে “Ballad of a Thin Man” স্থান পায় “Highway 61”-এ।
ডিলানের সহশিল্পী ববি গ্রেগ গানটি শুনে বলেছিলেন, “এটা একটা ভয়ানক গান, বব।”
তিনি ঠিকই বলেছিলেন।
“Ballad of a Thin Man” যেন আধুনিক জীবনের অস্পষ্ট শত্রুর বিরুদ্ধে লেখা এক ব্যঙ্গাত্মক দলিল।
এটি বলছে সেই ব্যক্তির কথা, যিনি বুঝতেই পারছেন না চারপাশে কী হচ্ছে, অথচ যিনি নিজেই সেই ঘটনার কেন্দ্রে।
গানের সেই অমর লাইনটি আজও আমাদের ভেতর কাঁপন তোলে—
“তুমি জানো কিছু একটা ঘটছে, কিন্তু জানো না সেটা কী/ তাই তো, মিস্টার জোনস?”
এই ‘মিস্টার জোনস’ কে?
তিনি কি একজন নির্দিষ্ট সাংবাদিক, যেমনটি কেউ কেউ বলেন?
নাকি তিনি আমাদেরই এক প্রতিচ্ছবি—যে আজকের পৃথিবীতে প্রবেশ করেছে, কিন্তু কোন খেলায় সে জড়িয়েছে, সেটা বোঝার ক্ষমতা তার নেই?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই আজও আমরা ফিরে যাই এই গানে।
আজ আমরা দাঁড়িয়ে আছি এক অদ্ভুত বাস্তবতায়—
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দাপটে বিভ্রান্ত এক সমাজ,
তথ্যের দৌড়ে বিভ্রান্ত সত্যবোধ,
জলবায়ু সংকট,
রাজনৈতিক উগ্রতা,
এবং সবকিছুর মাঝে ব্যক্তিগত অসহায়তা।
এই পরিস্থিতিতে ডিলানের গান যেন ভবিষ্যতের এক সতর্কবাণী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
গানটি বলছে এক সার্কাসময় জগতের কথা, যেখানে উপস্থিত আছে: তলোয়ার গেলার, উট, গরু, ভুতুড়ে চরিত্র, কাঠুরে।
তারা যেন আজকের এই প্রহসনের প্রতীক।
গানের এক জায়গায় বলা হয়:
“তলোয়ার গেলার এসে বলে, ‘এই নাও তোমার গলা, ধন্যবাদ ধার দেওয়ার জন্য।’”
অদ্ভুত, স্যুররিয়াল, কিন্তু ভয়ংকরভাবে প্রাসঙ্গিক।
আজকের তথাকথিত “ডেটা” আর অ্যালগরিদমের দুনিয়াতে, আমরা ভুলে যাই—সবকিছু সংখ্যায় মাপা যায় না।
আর সব কিছু জানা যায় না।
ডিলান যেন বলে গেছেন, “তুমি গরু—দুধ দাও, নইলে ফিরে যাও।”
এটাই আজকের সমাজ: ফলাফল দাও, প্রেক্ষাপট নয়।
আমরা ভেবেছিলাম, শিক্ষা, পেশা, সামাজিক অবস্থান আমাদের নিরাপত্তা দেবে।
কিন্তু ডিলান জানিয়ে দেন:
যেখানে আমরা যাচ্ছি, সেখানে ‘The Great Gatsby’ও তোমাকে রক্ষা করতে পারবে না।
এই গানটি শুধুই একটা ব্যঙ্গ নয়।
এটা এক নিরব সত্যকথন—যেখানে প্রত্যেকেই মিস্টার জোনস।
একটি ঘরে ঢুকে পড়ে, চারদিকে অচেনা সব মুখ, আর নিজেই প্রশ্ন করে:
“ও আমার ঈশ্বর, আমি কি একা?”
এই অনুভবই আমাদের বাস্তবতা।
ডিলানের গান আমাদের সেই ঘরে নিয়ে যায়, যেটা চেনা অথচ অচেনা।
এক ভয়ানক বাস্তবতার মুখোমুখি করে দেয়, যেখানে কেউ জানে না কী হচ্ছে, অথচ সবাই তাতে জড়িত।
আর তাই, ষাট দশকের একটি গান হয়ে ওঠে ২০২৫ সালের সবচেয়ে সমসাময়িক দলিল।
এই লেখাটি ওয়াশিংটন পোষ্ট থেকে নেয়া।
লেখক সেবাস্টিয়ান স্মির থেকে অনুবাদ