প্রস্তাবিত বাজেটে থাকছে রাজস্ব আদায়ে নতুন কৌশল, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ে থাকছে নতুন কৌশল। শুল্ক বৃদ্ধির কৌশল, ভর্তুকি হ্রাস, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে সরকার।
নিজস্ব প্রতিবেদক :
২০২৫–২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে রাজস্ব আদায়ে নতুন কৌশল গ্রহণ করতে যাচ্ছে সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, এবারের বাজেটে রাজস্ব বাড়াতে বেশ কিছু পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধির চিন্তা করা হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে এমএস রড, আমদানিকৃত গাড়ি, টেলিভিশন, ফ্রিজ, এয়ার কন্ডিশনার, ওভেন, বিদেশি ফল ও বিলাসী চকলেট।
এ ধরনের পদক্ষেপে বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর ব্যয়চাপ বাড়বে। এমএস রডে উৎপাদন পর্যায়ে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, ফলে নির্মাণ খরচ বাড়বে এবং ফ্ল্যাটের দামও বেড়ে যেতে পারে।
রাজস্ব আহরণ ও ব্যয়ের চ্যালেঞ্জ
সরকারের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চাপ রাজস্ব সংগ্রহ। এবারের বাজেটেও নির্বাচনি ব্যয়ের জন্য বড় অঙ্কের বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের চাহিদার ভিত্তিতেই এ বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
তাছাড়া, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নতুন সুবিধাভোগীদের অন্তর্ভুক্তি, শহীদ পরিবার ও অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ এবং উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় সামলাতেই রাজস্ব বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
দেশীয় শিল্প সুরক্ষা ও ভূমি কর
রাজস্ব বাড়াতে দেশীয়ভাবে উৎপাদিত না হওয়া বিলাসী পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত ভূমি উন্নয়ন কর খাতে কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ খাতে রাজস্ব আহরণের উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা থাকলেও যথাযথ সংগ্রহ এতদিন হয়নি।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়ছে
নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে প্রায় ১,৭৫০ কোটি টাকা, যা দাঁড়াবে মোট ১৯,৭০৭ কোটি টাকা। ভাতা বাড়বে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত, ফলে সর্বনিম্ন ভাতা ৬৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৯০০ টাকা হতে পারে।
২০২৫–২৬ অর্থবছরে নতুন করে ৬ লাখ ২৪ হাজার জনকে ভাতার আওতায় আনা হবে। আগের অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ২৬ হাজার। অর্থাৎ এই বছর কিছুটা সংযত নীতিই অনুসরণ করছে সরকার।
বাজেট ঘাটতি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় পরবর্তী বাজেটের আকার অন্তত ৭ হাজার কোটি টাকা কম হচ্ছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে রাখতে চায় সরকার।
চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে ২০২৫–২৬ বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হতে পারে। মার্চে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৩৫ শতাংশ।
অন্যদিকে, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের নিচে থাকলেও সরকার ৫.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করছে।
ভর্তুকি কমাতে নির্দেশনা
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, সরকার ভর্তুকি কমানোর নীতিতে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ‘সিস্টেম লস’ কমাতে বলা হয়েছে। বিশেষভাবে এলএনজি খাতে ভর্তুকি হ্রাসেরও সুপারিশ এসেছে, কারণ সরকার বেশি দামে আমদানি করে কম দামে সরবরাহ করছে।