১৫ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রধান অভিযুক্ত আদিল আহমেদ থোকার, পাকিস্তান থেকে ফিরে সংগঠিত করে নৃশংসতা

সমাজকাল প্রতিবেদক :
কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার বিজবেহারার গুর্রে গ্রামের বাসিন্দা আদিল আহমেদ থোকার পাহেলগাঁওর বৈসরানে সম্প্রতি সংঘটিত জঙ্গি হামলার অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী বলে চিহ্নিত হয়েছেন। ২২ এপ্রিলের ওই মর্মান্তিক হামলায় ২৬ জন প্রাণ হারান।

পাকিস্তান যাত্রা এবং জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা
২০১৮ সালে আদিল আহমেদ থোকার ছাত্র ভিসায় পাকিস্তান যান। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, দেশ ছাড়ার আগেই আদিলের মধ্যে উগ্রপন্থার লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। পাকিস্তানে পৌঁছানোর পর তিনি প্রকাশ্য জীবন থেকে আড়ালে চলে যান এবং পরিবারের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

প্রায় আট মাস ধরে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে জানা যায়, তিনি পাকিস্তানে অবস্থানকালে নিষিদ্ধ সংগঠন লস্কর-ই-তৈবা এর হ্যান্ডলারদের মাধ্যমে আদর্শিক ও সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

ভারতে পুনঃপ্রবেশ
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে আদিল আবার ভারতের মাটিতে ফিরে আসে। পুঞ্চ-রাজৌরি সেক্টরের দুর্গম এলাকা পেরিয়ে সে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে প্রবেশ করে। এই সময় তার সঙ্গে আরও তিন-চারজন সশস্ত্র সঙ্গী ছিল, যাদের মধ্যে একজন পাকিস্তানি নাগরিক হাশিম মুসা ওরফে সুলেমান, যিনি হামলার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত।

গোপন তৎপরতা ও হামলার প্রস্তুতি
ভারতে ঢোকার পর আদিল থোকার গোপনে চলাফেরা শুরু করে। একাধিক সুত্র জানায়, তিনি অনন্তনাগে গা ঢাকা দিয়ে ছিল এবং পাকিস্তান থেকে আসা অন্য সন্ত্রাসীদের আশ্রয়ও দেন। পাশাপাশি, স্থানীয় ঘাঁটি ও সক্রিয় ঘুমন্ত সেলের সাথে যোগাযোগ পুনরায় চালু করেন।

বৈসরান এলাকা পর্যটকদের জন্য মার্চ ২০২৫ থেকে ধীরে ধীরে উন্মুক্ত হওয়ায়, আদিল ও তার দল এই সময়কে হামলার সেরা সুযোগ হিসেবে বেছে নেয়।

বৈসরান হামলার বিবরণ
২২ এপ্রিল দুপুর ১টা ৫০ মিনিট নাগাদ হামলাকারীরা বৈসরানের ঘন পাইনবনের আড়াল থেকে বের হয়ে পর্যটকদের দিকে হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, হামলাকারীরা কয়েকজনকে ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করতে বাধ্য করে এবং ইসলামিক আয়াত পাঠ করতে বলে। যারা পড়তে ব্যর্থ হয়, তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়।

মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে পাঁচ সদস্যের দলটি তিনটি আলাদা অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে আক্রমণ চালায়। ঘটনাস্থলে ২৫ জন পর্যটক ও একজন স্থানীয় ঘোড়াচালক নিহত হন। এ ছাড়াও নৌবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার দুই সদস্য শহিদ হন।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ
জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ আদিল আহমেদ থোকার, হাশিম মুসা ও আলি ভাই ওরফে তালহা ভাইকে হামলার প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাদের স্কেচ প্রকাশ করা হয়েছে এবং প্রত্যেকের জন্য ২০ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে অভিযুক্ত আদিল ও আসিফ শেখ (ত্রালের বাসিন্দা)-এর বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অভিযান চালায় নিরাপত্তাবাহিনী। সেখানে বিস্ফোরক মজুদের প্রমাণ পাওয়া গেছে। আসিফ শেখের ভূমিকা সহায়তা বা প্রযুক্তিগত সহযোগিতার পর্যায়ে ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অনন্তনাগ, পাহেলগাঁও এবং আশপাশের বনাঞ্চলে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চলছে।