সমাজকাল ডেস্ক:
আজ আন্তর্জাতিক জীব বৈচিত্র্য দিবস বা বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস। এটি হল জীববৈচিত্র্য বিষয়ক উন্নয়নে জাতিসংঘ অনুমোদিত একটি আন্তর্জাতিক দিবস। এটি বর্তমানে ২২ মে অনুষ্ঠিত হয়। এবারের আন্তর্জাতিক জীব বৈচিত্র্য দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানে ভবিষ্যৎ উন্নয়নের ছাপ।
আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস জাতিসংঘের ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্তর্গত। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার এই বৃহত্তর উদ্যোগে, জীববৈচিত্র্যের বিষয়টি টেকসই কৃষিতে স্টেকহোল্ডারদের উদ্বেগের বিষয়; মরুকরণ, জমির অবক্ষয় এবং খরা; জল এবং স্যানিটেশন ; স্বাস্থ্য এবং টেকসই উন্নয়ন ; শক্তি; বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন, জ্ঞান বিনিময় এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি; শহুরে স্থিতিস্থাপকতা এবং অভিযোজন; টেকসই পরিবহন ; জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ; মহাসাগর এবং সমুদ্র; বন; আদিবাসী সহ দুর্বল গোষ্ঠী ; এবং খাদ্য নিরাপত্তা। টেকসই উন্নয়নে জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটি রিও+২০ ফলাফলের নথি, “দ্য ওয়ার্ল্ড উই ওয়ান্ট: এ ফিউচার ফর অল” এ স্বীকৃত হয়েছিল।
১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের দ্বিতীয় কমিটি কর্তৃক গঠিত হওয়ার পর থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ২৯ ডিসেম্বর কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি কার্যকর হওয়ার দিনটি উদযাপনের জন্য এটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০ ডিসেম্বর, ২০০০,[৩] তারিখটি ২২ মে, ১৯৯২ তারিখে রিও ডি জেনেইরো আর্থ সামিটে কনভেনশন গৃহীত হওয়ার স্মরণে এবং আংশিকভাবে ডিসেম্বরের শেষের দিকে আসা অন্যান্য ছুটির দিনগুলো এড়াতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।
🌱 জীব বৈচিত্র্য কী?
জীব বৈচিত্র্য বা বায়োডাইভারসিটি বলতে বোঝানো হয় প্রাণী, উদ্ভিদ, অণুজীব এবং তাদের পরিবেশগত ব্যবস্থার মধ্যে বিদ্যমান বৈচিত্র্য ও আন্তঃসম্পর্ক। এর মধ্যে পড়ে এক প্রজাতির ভেতরের জেনেটিক বৈচিত্র্য, বিভিন্ন ফসলের জাত, গবাদিপশুর ভিন্ন ভিন্ন জাত, বনভূমি, হ্রদ, মরুভূমি, কৃষিজমি, এমনকি শহরাঞ্চলেও টিকে থাকা ক্ষুদ্র বাস্তুতন্ত্রগুলো। এসবই প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের অনিবার্য অংশ।
🛑 জীব বৈচিত্র্যের সংকট
বর্তমান সময়ে জীব বৈচিত্র্যের অবক্ষয় এক বৈশ্বিক সংকটে রূপ নিয়েছে। বনাঞ্চল উজাড়, দূষণ, অবৈধ শিকার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অতি ব্যবহারের ফলে অসংখ্য প্রজাতি বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। প্রতি বছর হাজার হাজার প্রজাতি হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদার চাপে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, জীব বৈচিত্র্য হ্রাসের ফলে জুনোসিস (পশু থেকে মানুষের শরীরে সংক্রমিত রোগ) যেমন করোনা ভাইরাসের মতো মহামারির ঝুঁকিও বাড়ছে।
🌍 জীব বৈচিত্র্যের গুরুত্ব
খাদ্য নিরাপত্তা: মাছ বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩ বিলিয়ন মানুষের জন্য প্রাণীজ প্রোটিনের ২০% সরবরাহ করে।
ঔষধ: উন্নয়নশীল দেশগুলোর গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রায় ৮০% মানুষ প্রাকৃতিক উদ্ভিদ-ভিত্তিক চিকিৎসার ওপর নির্ভরশীল।
জলবায়ু সহনশীলতা: জীব বৈচিত্র্য আমাদের বাস্তুতন্ত্রকে ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
📢 এবারের বার্তা: প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান
২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য Harmony with Nature and Sustainable Development আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে একটি সুষম সম্পর্ক গড়ে তুলতে না পারলে টেকসই উন্নয়ন অসম্ভব। আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের ওপর।
🌿 শিক্ষা, নীতি ও নাগরিক দায়িত্ব—এই তিনটি ক্ষেত্রেই সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।
🧭 করণীয়
- পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন অভ্যাস করা
- স্থানীয় প্রজাতি রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি
- কৃষিক্ষেত্রে জৈবিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণ
- বন ও জলাভূমি সংরক্ষণে সক্রিয় ভূমিকা রাখা
- স্কুল-কলেজে জীব বৈচিত্র্য বিষয়ক শিক্ষা প্রসার
আন্তর্জাতিক জীব বৈচিত্র্য দিবস শুধু একটি দিন নয়, এটি প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি আহ্বান—প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে বেঁচে থাকার প্রতিশ্রুতি। আমরা যদি আজ প্রকৃতিকে রক্ষা করি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মও পাবে বাসযোগ্য এক পৃথিবী।