পুতিন-ট্রাম্প দূতের বৈঠক : ইউক্রেন ইস্যুতে আলোচনা এগোনোর ইঙ্গিত
সমাজকাল ডেস্ক:
মস্কোয় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের মধ্যে তিন ঘণ্টাব্যাপী ‘গঠনমূলক ও অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুতিনের উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ জানিয়েছেন, বৈঠকে বিশেষভাবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা না হলেও, বৈঠক চলাকালেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া শান্তিচুক্তির পথে ‘অনেকটাই এগিয়ে গেছে’।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মস্কোর বিরুদ্ধে আরও চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি রাশিয়াকে একটি প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি মানতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য দায়ী করেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরে এটি ছিল উইটকফের চতুর্থ মস্কো সফর। শহরের কেন্দ্রে তাঁর বহর প্রবেশের সময় রাস্তার ট্রাফিক সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পুতিনের উপদেষ্টা উশাকভ বলেন, “এই বৈঠক শুধু ইউক্রেন ইস্যু নয়, আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতেও রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।” তিনি আরও জানান, ইউক্রেন সংকটে সরাসরি রুশ-ইউক্রেনীয় আলোচনার সম্ভাবনা বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে।
সম্প্রতি পুতিনও ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুদ্ধের শুরুর পর প্রথমবারের মতো তিনি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার জন্য উন্মুক্ত। তবে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসেনি।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “পুতিনের সঙ্গে আমাদের দূত এখনই বৈঠক করছেন এবং আমি মনে করি আমরা অনেক ভালো চুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, যার মধ্যে রয়েছে শুল্ক এবং বাণিজ্য চুক্তিও।” তিনি আরও বলেন, তাঁর লক্ষ্য ইউক্রেনে চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটানো, যেখানে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫ হাজার ইউক্রেনীয় ও রুশ নাগরিক প্রাণ হারাচ্ছেন।
তবে সমঝোতার পথে এখনো বড় ফারাক রয়ে গেছে। মস্কো বৈঠকে ইউক্রেনের কোনো প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
জেলেনস্কি সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, “আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাব মেনে ৪৫ দিন আগে যুদ্ধবিরতির জন্য রাজি হয়েছি। কিন্তু রাশিয়া তা প্রত্যাখ্যান করেছে। চাপ ছাড়া এটি সমাধান সম্ভব নয়।”
তিনি রাশিয়ার ওপর নতুন করে অভিযোগ এনেছেন যে, তারা উত্তর কোরিয়া থেকে ক্ষেপণাস্ত্র আমদানি করছে এবং বৃহস্পতিবার কিয়েভে যে হামলায় ১২ জন নিহত হয়েছে, তাতে ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্রের অধিকাংশ যন্ত্রাংশ বিদেশি, বিশেষ করে মার্কিন সংস্থাগুলির তৈরি ছিল বলে দাবি করেন।
অন্যদিকে ট্রাম্প একদিকে পুতিনকে সামাজিক মাধ্যমে সরাসরি “Vladimir STOP!” বলে বার্তা দিলেও, অপরদিকে টাইম ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি ইউক্রেনকেই যুদ্ধ শুরুর জন্য দায়ী করেছেন এবং ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
জেলেনস্কি পাল্টা জবাবে বলেন, “কেবলমাত্র ইউক্রেনের জনগণেরই সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার আছে কোন ভূখণ্ড আমাদের। আমাদের অবস্থান বদলাবে না।”
এদিকে উইটকফ-পুতিন বৈঠকের আগের দিন মস্কোয় গাড়িবোমা হামলায় এক শীর্ষ রুশ জেনারেল নিহত হন। রাশিয়া এ ঘটনার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করলেও কিয়েভ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। একই সময়ে ইউক্রেনের হামলায় রুশ অঞ্চলে দুইজন নিহত হয়েছে বলেও দাবি করেছে বেলগোরদের স্থানীয় গভর্নর।