১৫ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ট্রাম্প

পুতিন-জেলেনস্কির সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ট্রাম্পের টেলিফোন কূটনীতি

সমাজকাল ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলাদা আলাদা ফোনালাপ করবেন। আলোচনার মূল লক্ষ্য—এই ভয়াবহ সংঘাতের অবসান এবং সম্ভাব্য বাণিজ্যিক অগ্রগতি নিশ্চিত করা।

ট্রাম্প শনিবার নিজের ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে লেখেন:

“এই রক্তগঙ্গায় প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৫,০০০ রুশ ও ইউক্রেনীয় সেনা প্রাণ হারাচ্ছে। এটা থামাতে হবে। যুদ্ধ যা কখনোই শুরু হওয়া উচিত ছিল না, সেটার একটি অবসান দরকার।”

যদিও ট্রাম্প যে সেনা মৃত্যুর পরিসংখ্যান দিয়েছেন তা সরকারি বা নিরপেক্ষ কোনো উৎস দ্বারা যাচাই করা হয়নি, তবুও তা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রুশ সংবাদমাধ্যমকে জানান, পুতিন ও ট্রাম্পের টেলিফোন আলাপের প্রস্তুতি চলছে। ট্রাম্প জানান, তিনি পুতিনের সঙ্গে আলোচনার পর জেলেনস্কি এবং ন্যাটো জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও কথা বলবেন। তাঁর আশাবাদ:

“আমি আশা করি এটি একটি ফলপ্রসূ দিন হবে। হয়তো একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে এবং আমরা ভয়াবহ যুদ্ধের ইতি দেখতে পারবো।”

🔍 কূটনীতির বাস্তবতা নিয়ে সংশয়
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
সম্প্রতি ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনা তেমন কোনো অগ্রগতি আনতে পারেনি।
ইউক্রেন একাধিকবার শর্তহীন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিলেও রাশিয়া বেশ কিছু ‘অগ্রহণযোগ্য শর্ত’ দিয়েছে, যার ফলে আলোচনা ভেস্তে গেছে।

ট্রাম্পও সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রতি কঠোর মনোভাব গ্রহণ করেছেন। সামরিক সহায়তার বিষয়ে তিনি বলেন,

“তারা যেভাবে মার্কিন ট্যাক্সদাতার অর্থ খরচ করেছে, তা দেখলে আমি বিরক্ত হই।”

এছাড়া তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে বিদ্রূপ করে বলেন:

“তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিক্রেতা!”

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময় থেকেই ট্রাম্প ইউক্রেনের সহায়তা প্যাকেজ বন্ধ করতে চাচ্ছেন, যাতে যুদ্ধ থামাতে একটি চুক্তি ‘চাপিয়ে’ দেওয়া যায়। এই হস্তক্ষেপ আসলে রাজনৈতিক প্রভাবের অংশ কিনা, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

☠️ ড্রোন হামলায় নিহত বেসামরিক নাগরিক, পাল্টা অভিযোগ জেলেনস্কির
এদিকে শনিবার ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে জানান,
রাশিয়ার চালানো এক ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে একটি যাত্রীবাহী বাসে ৯ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

তিনি বলেন:

“প্রতিদিনই যুদ্ধবিরতির সুযোগ থাকে। ইউক্রেন বহু আগে থেকেই কোনো শর্ত ছাড়াই পূর্ণ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়ে আসছে। কিন্তু রাশিয়া প্রতিদিন হত্যাযজ্ঞ চালানোর ক্ষমতা দেখিয়ে যাচ্ছে।”

🌐 একটি নতুন কূটনৈতিক অধ্যায়ের সম্ভাবনা?
বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, ট্রাম্পের এই ঘোষণা যদি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় এটি একটি নতুন কূটনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে রাশিয়া এবং ইউক্রেন কতটা নমনীয় অবস্থান নেয় তার ওপর।

ট্রাম্পের সমর্থকরা একে ‘শান্তির জন্য সাহসী পদক্ষেপ’ বললেও সমালোচকরা মনে করছেন, এটি নির্বাচনী কৌশলের অংশ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ইউক্রেন যুদ্ধ একটি বড় ইস্যু, যেখানে ট্রাম্প বাজি ধরেছেন যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে পারার ওপর।

বিশ্ব রাজনৈতিক মঞ্চে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে এলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি কি পারবেন যুদ্ধবিরতির পথ প্রশস্ত করতে, না কি এটি হবে আরেকটি ‘বড় মঞ্চে ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং’-এর প্রচেষ্টা—এ প্রশ্ন এখন সময়ের কাছে রেখে যেতে হচ্ছে।

তবে একথা অনস্বীকার্য যে, যেকোনো উদ্যোগ, যা রক্তপাত বন্ধ করতে পারে, তা বিশ্ববাসীর দৃষ্টিতে স্বাগতযোগ্য।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
X
LinkedIn