পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতে ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করলেন ভারতের শীর্ষ জেনারেল, পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সংঘাতে অন্তত একটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। তবে যুদ্ধ পারমাণবিক পর্যায়ে গড়ায়নি বলেও তিনি ।
সমাজকাল ডেস্ক:
সম্প্রতি পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতে ভারতের একাধিক যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে—এ কথা অবশেষে স্বীকার করেছেন ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান (চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ) জেনারেল অনিল চৌহান। শনিবার (৩১ মে) সিঙ্গাপুরে শ্যাংরি-লা ডায়ালগ নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে রয়টার্স ও ব্লুমবার্গকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তবে নির্দিষ্ট সংখ্যা জানাতে তিনি অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। তাঁর এই বক্তব্য পাকিস্তানভিত্তিক দৈনিক ডন এবং কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা নিশ্চিত করেছে।
এর আগে শুক্রবার ভারতের রাজনীতিক সুব্রহ্মণ্যম স্বামী দাবি করেন, চলমান সামরিক সংঘাতে পাকিস্তান অন্তত পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, এই ক্ষতির জন্য দায়ী ভারতের ফ্রান্স থেকে কেনা রাফাল যুদ্ধবিমান এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে করা সেই চুক্তি।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে নামিয়েছে—যার মধ্যে চারটি রাফাল। যদিও ভারতের সেনাপ্রধান এই দাবিকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি শুধু একটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক বক্তব্যে জেনারেল চৌহান বলেন, “সংখ্যা এখানে মুখ্য নয়, আসল বিষয় হলো—কেন এই ক্ষয়ক্ষতি ঘটেছে এবং পরবর্তী সময়ে আমরা কী ব্যবস্থা নিয়েছি।”
রয়টার্সকে তিনি আরও জানান, ৭ মে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রাথমিক ধাপে ভারতীয় বাহিনী কিছু ক্ষতির মুখে পড়ে। তবে খুব দ্রুত কৌশলগত বিশ্লেষণ করে সেই ভুল শুধরে ফেলে এবং ৮ ও ১০ মে পাকিস্তানের লক্ষ্যবস্তুতে আবার হামলা চালায়।
অন্যদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দাবি, ৭ মে’র ক্ষতির পর ভারত আর কোনো যুদ্ধবিমান উড়ায়নি।
এই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর জঙ্গি হামলার পর, যেখানে অন্তত ২৬ জন প্রাণ হারান।
জেনারেল চৌহান আরও জানান, এই সংঘাত কখনোই পারমাণবিক পর্যায়ে গড়ায়নি। বরং, দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের কূটনৈতিক চ্যানেল সবসময় খোলা ছিল। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, তার মধ্যস্থতার কারণেই একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
জেনারেল চৌহান বলেন, “পারমাণবিক যুদ্ধ এবং প্রচলিত যুদ্ধ—এই দুইয়ের মধ্যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে। আমি নিশ্চিত, আমরা সেই সীমা অতিক্রম করিনি।”
তবে এই বক্তব্য ভারতের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত সংঘাতে ক্ষয়ক্ষতির সবচেয়ে স্পষ্ট স্বীকৃতি। এর বিপরীতে প্রধানমন্ত্রী মোদি দেশে ফিরে বিভিন্ন জনসভায় ‘বিজয়গাঁথা’ প্রচার করছেন এবং পাকিস্তানকে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়ার হুমকি দিচ্ছেন।