১৫ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজার মানবিক বিপর্যয় : ইসরায়েলের হামলা, অবরোধ ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রশ্ন

সমাজকাল ডেস্ক :

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের টানা দুই মাসের অবরোধ ও সামরিক অভিযানে চরম মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ মে) নতুন করে মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ হামলার লক্ষ্য ছিল দেইর আল-বালাহ ও আল-মাওয়াসি এলাকা, যেখানে ইতোমধ্যেই বহু বাস্তুচ্যুত মানুষ অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছে। একই সময়ে গাজা সীমান্তে আটকে আছে প্রায় ৩ হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক, যেগুলোতে খাদ্য, ওষুধ ও জরুরি সরঞ্জাম রয়েছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (UNRWA) সতর্ক করেছে যে, এই অবরোধ অব্যাহত থাকলে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি অনিবার্য।

মৃত্যু ও ধ্বংসের হিসাব: দুই ভিন্ন পরিসংখ্যান
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৫২,৪০০ ফিলিস্তিনি, আহত ১,১৮,০১৪। তবে গাজার সরকার পরিচালিত গণমাধ্যম অফিস দাবি করছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকা বহু মানুষ নিখোঁজ হওয়ায় প্রকৃত মৃতের সংখ্যা ৬১,৭০০ ছাড়িয়ে গেছে।
অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণে ইসরায়েলে নিহত হন ১,১৩৯ জন, এবং বন্দি হন ২০০-এর বেশি মানুষ। সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়াতেই শুরু হয় ইসরায়েলের বিপুল পাল্টা সামরিক অভিযান।

আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ
জাতিসংঘের একজন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ কঠোর ভাষায় মন্তব্য করেছেন—ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আন্তর্জাতিক আইন, বিশেষ করে চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন, সরাসরি লঙ্ঘন করছে। যুদ্ধবিধি অনুসারে, অসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্বিচার হামলা চালানো এবং মানবিক সহায়তা বন্ধ রাখা যুদ্ধাপরাধের শামিল।

ত্রাণ আটকে রাখার কৌশল: রাজনৈতিক চাপের অস্ত্র?
বিশ্লেষকদের মতে, গাজার ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেওয়া কেবলমাত্র নিরাপত্তাজনিত নয়, এটি রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের একটি কৌশলও। ইসরায়েল চায় হামাস ও অন্যান্য প্রতিরোধ শক্তিকে দুর্বল করতে, কিন্তু এর মাধ্যমে পুরো জনগণকেই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে, গাজা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। শিশুদের অপুষ্টি এবং পানির সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থী কণ্ঠর দমন
এদিকে, ইসরায়েলপন্থী নীতির পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী ফিলিস্তিনপন্থী কর্মী মোহসেন মাহদাওয়িকে বিতাড়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও আদালত সে আদেশ স্থগিত করেছে। এক বিচারক তার মুক্তি মঞ্জুর করে বলেছেন, তিনি এখন আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন। এটি একপ্রকার নজির সৃষ্টি করেছে যে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আন্তর্জাতিকভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও অবরোধের ফলে একাধারে যুদ্ধাপরাধ, মানবিক বিপর্যয় এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন একসঙ্গে ঘটছে। ত্রাণ প্রবেশে বাধা, ব্যাপক গণহত্যা, এবং পরিকাঠামো ধ্বংস—এসব কেবল বর্তমান সংকটই নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী ট্র্যাজেডির ভিত্তি রচনা করছে।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের নীরবতা ও দ্বৈত নীতির কারণে এই সংকট আরও গভীরতর হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কত প্রাণ হারালে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা সক্রিয় হবে?